কৌশলে বাড়ানো হলো ভোজ্যতেলের দামও
নিজস্ব প্রতিবেদক: পেঁয়াজ, চাল এবং সবজির দামের সুযোগে এবার কৌশলে ভোজ্যতেলের দামও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো বলছে, বাজারে তারা তেলের দাম বাড়ায়নি। বোতলের গায়ে লেখা দামেই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। তেল সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। চাহিদায়ও পরিবর্তন ঘটেনি। তারপরও বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানি বোতলের গায়ের দামেই তেল বিক্রি করছে সত্য। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্যে যে ‘ছাড়’ ছিল তা বাতিল করেছে। এই ‘ছাড়’ তুলে নেওয়ায় দাম বেড়েছে।
এদিকে সরকার ও ভোজ্যতেল কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। আমদানি নির্ভর ভোজ্যতেলের এলসি প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তাহলে কীভাবে, কারা বাড়িয়েছে এই পণ্যটির দাম সে কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে সরকার। কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বাজারে সব ধরনের সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে ৩ থেকে ৫ টাকা। তবে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে বেশি। স্থানভেদে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে, আগে যা বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা লিটারে। একইভাবে সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ড এবং মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে দাম লেখা রয়েছে ৫০০ টাকা। আর রূপচাদা সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতলের গায়ে দাম লেখা রয়েছে ৫৩০ টাকা। বোতলের গায়ে লেখা দামের কোনও পরিবর্তন হয়নি গত কয়েক মাসে। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্যে ‘ছাড়’ বাতিল করা হয়েছে। এই ‘ছাড়’ বাতিল করায় বেড়েছে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম।
কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘১৫ দিন আগেও দেশের সিটি ও মেঘনাসহ প্রতিটি ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানি ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৪২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন ৪৩০ থেকে ৪৩৫ টাকা দরে। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলো তা বাড়িয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ৪৫২ টাকা দরে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ৪৬০ টাকা দরে। একইভাবে রূপচাঁদা ব্রান্ডের ৫ লিটার সয়াবিন তেল পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে কোম্পানি বিক্রি করেছে ৪৩৫ থেকে ৪৫০ টাকা দরে। ছাড় তুলে দেওয়ার কারণে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৬৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ৪৭০ টাকা দরে। বাজারে বোতলের গায়ে কিন্তু ওই আগের দর ৫০০ এবং ৫৩০ টাকাই লেখা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বোতলের গায়ে লেখা দাম যাচাই করলে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, কোম্পানি দাম বাড়িয়েছে। আসলে তো কোম্পানি প্রতি লিটারে দাম বাড়িয়েছে ৫ টাকার বেশি। কোম্পানিগুলোর এই ‘ছাড়’ দেওয়া এবং ‘ছাড়’ বাতিল দাম বাড়ানোর একটি চালাকি পদ্ধতি।
এদিকে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে বাংলাদেশ ট্য্যারিফ কমিশন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল পরিশোধনারী কয়েকজন কোম্পানির কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান নূর উর রহমান। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়নি। গত কয়েক মাস বাজারে একই দাম চলছে বলে জানালেও ‘ছাড়’ প্রত্যাহারেরর তথ্যটি বৈঠকে উপস্থাপন করেননি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বৈঠকে জানিয়েছেন, বোতলের গায়ে লেখা দামেই বাজারে সয়াবিন তেল সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান নূর উর রহমান জানিয়েছেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য পরিস্থিতি জানতে পরিশোধনকারী কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে বাজারে কী কারণে তেলের দাম বেড়েছে তা জানার চেষ্টা করছি। এদিকে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন জানিয়েছেন, বাজারে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মনিটরিং চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে মনিটরিং টিম কাজ করছে। কেউ কারসাজি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন