কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করছে সরকার: রিজভী
সাস নিউজ : সরকার নানা বক্তব্য দিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বুধবার সকালে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত আশ্বাস দেন বলে তারা জানিয়েছে।
এদিকে, কোনো গুজবে কান না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারী সংগঠনের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমাদের দাবি অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা চাই, কোটা সংস্কারের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা আসুক।
এ প্রসঙ্গে, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা প্রসেনজিত সরকার রেডিও তেহরানকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরাসরি ঘোষণা বা সরকারী প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
এর আগে আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। সকাল ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শত শত শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। বেলা ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন হল থেকে মিছিল সেখানে আসে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা পরে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য চত্বরের দিকে যান।
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের কারণে প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা।
সকাল ১০টার দিকে তাঁতীবাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে পুরান ঢাকার একটি অংশ- সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জ থেকে গুলিস্থানের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়াও কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে।আজ সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ও ফার্মগেটের এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মসূচী পালনের সময় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। রাজধানীর পান্থপথ, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মিরপুর রোড অবরোধ করেছেন তাঁরা।
সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে এক ছাত্রীকে নির্যাতনের প্রতিবাদে সারাদেশের মতো আন্দোলন করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কারেরর দাবিতে গাজীপুরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কোটা সংস্কারের দাবি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান এবং সড়ক অবরোধ করে রাখে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা এই অবরোধে অংশ নেয়।
এদিকে, কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘোষণা দেয়ার জন্য দুপুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ডুটা)আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। একইসাথে শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো ধরনের পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্যও প্রশাসনকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা সংস্কার করা হলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ সংসদ সন্তান কমান্ড। কোটা সংস্কারের আন্দোলন ব্যাপকতা পাওয়ার মধ্যে সংগঠনটির সভাপতি মেহেদি হাসান এই কথা জানিয়েছেন।
বর্তমানে দেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোটা, প্রতিবন্ধী এক শতাংশ, নারী ও জেলা কোটার জন্য মোট বরাদ্দ ৫৬ শতাংশ। ফলে এর কোনো শ্রেণিতে যারা পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য।এই পদ্ধতি সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন