কৃষিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি বিএনপির
নিউজ ডেস্ক: কৃষিক্ষেত্রে অরাজকতার জন্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার (২৮ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ পদত্যাগ দাবি করেন।
রিজভী বলেন, ‘কৃষককে ধ্বংস করতে কৃষিক্ষেত্রে আজ অরাজকতা চলছে। আর এই অরাজকতার জন্য কৃষিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী দায়ী। তাই আমরা এই মুহূর্তে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। কোন সভ্য সরকার হলে ইতোমধ্যে তারা পদত্যাগ করতেন।’
সরকারের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন,‘আপনাদের (সরকার) নীতির কারণে ক্ষুধা, হাহাকার, অনাহার ও অর্ধাহারে মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। জোর জবরদস্তি করে আর ক্ষমতায় থেকে দেশের জনগণের প্রতি জুলুম করবেন না। অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। জনগণকে বাঁচতে দিন।’
রিজভী বলেন, ‘এই অবৈধ,অনির্বাচিত সরকারের লোকজন একদিকে লুটপাট করে অর্থনীতি ফোকলা করে দিচ্ছে অন্যদিকে অভাবের তাড়নায় হতদরিদ্র মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সারাদেশে দরিদ্র মানুষের করুণ দশা এখন। আর সরকার বলছে দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অভাবের তাড়নায় যশোরের শার্শা উপজেলার চালিতাবাড়িয়া দীঘা গ্রামে গত ২৬ মে রাতে দুই শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর এক মা আত্মহত্যা করেছেন। এর তিন দিন আগে অভাবের কাছে হার মেনে নরসিংদীতে দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন এক বাবা। অভাবে জর্জরিত হয়ে এক সপ্তাহে ৯ জনের আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে সরকারি দলের নেতা-কর্মীসহ অন্তত: ৬ লাখ লোক বিদেশে যাচ্ছে ঈদ করতে। যেখানে আগে ঈদ করতে মানুষ যেতো গ্রামের বাড়িতে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশে সম্পদ বন্টনের এই অসাম্য এবং দুর্নীতি করার অবারিত ব্যবস্থার জন্য দেশে এক লুটেরা গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। আর অন্যদিকে মানুষ অভাবের কারণে করছে আত্মহত্যা, ধানের দাম না পেয়ে কৃষকরা ক্ষেতে আগুণ দিচ্ছে বা মহাসড়কে ধান ঢেলে দিচ্ছে ! গণবিরোধী সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় এক ভয়াবহ অবস্থা চলছে দেশে। বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায় দেবখণ্ড গ্রামে অল্প জমির মালিক মরিয়ম বেগম তার ক্ষেতের ধান হাটে বিক্রি করে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিতে ব্যর্থ হয়ে নিজের টেলিভিশন বিক্রি করে মুজুরি পরিশোধ করে। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ধান পুড়িয়ে দেয়ার একই রকম দৃশ্য সারাদেশেই সংঘটিত হচ্ছে। চারদিকে দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য, অস্বস্তি, ক্ষুধা ও হাহাকার। ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে সরকার উদাসীন, এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই, বরং তা বৃত্তপথে ঘোরপাক খাচ্ছে। প্রতিদিনই কৃষকের মনে অন্ধকার ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-নেতার কথাবার্তায় মনে হয় তারা নিজেদের পদ খুঁইয়ে হতাশায় ভুগছেন। শুধুই বিএনপিকে উপদেশ দিচ্ছেন। আমার মনে হয় তারা মন্ত্রীত্ব হারিয়ে বিএনপির কনসালটেন্ট হতে চাচ্ছেন। নিজেদের দলের নেতা-কর্মীরা সারাদেশে লুটপাট, খুন-ধর্ষণ, খাদ্যে ভেজাল ও মাদক ব্যবসায়ে লিপ্ত। এমনকি তাদের কিছু জনপ্রতিনিধিও আছেন যারা মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। গোটা দেশে তাদের বেপরোয়া অপকর্মে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। তা নিয়ে নাসিম সাহেবদের মাথা ব্যথা নেই। এখন বিএনপি তাদের ধ্যান-জ্ঞান। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করার জন্য কথাবার্তায় অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেছেন। বিএনপির কি নিয়ে আন্দোলন করা উচিত সেই উপদেশও দিচ্ছেন। আপনার নেত্রীকে বলুন যেহেতু অনেক দিন অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগে ভেজাল ঢুকে গেছে তাই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দল শুদ্ধ করুন। জনগণকে স্বৈরশাসনের ভারী পাথর থেকে দয়া করে পরিত্রাণ দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিডনাইটে ভোট ডাকাতির অন্যতম কারিগর নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদকে রবিবার পুরস্কৃত করেছে মিডনাইট সরকার। তাকে পদায়ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের সচিব করা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেনকে। যিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগত ও বিশ্বস্ত হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি অর্জন করেছেন। ’আওয়ামী দলদাস’ সরকারী কর্মকর্তা ও ভোটারশূন্য একতরফা নির্বাচনী সংস্কৃতির হোতা নির্বাচন সচিবকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বদলি করার ফলে দেশের স্থানীয় সরকারগুলোতে আওয়ামীকরণের ষোলকলা পূর্ণ হবে। এখন স্থানীয় সরকারগুলোতে নির্বাচনের বদলে সিলেকশনের পথ আরও সহজ হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহিদা রফিক, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক শরাফত আলী সপু,সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ,সহ- দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন