কিস্তি পরিশোধে চাপ দিচ্ছে এনজিও
ঝালকাঠি সংবাদদাতা: লকডাউনের কারণে অর্থ ও খাদ্যাভাবে দুর্ভিষহ সময় অতিক্রম করছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। গত কয়েক মাস কোনো আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকেই। বিশেষ করে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক।
এ অবস্থায় তাদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে এনজিওর ঋণের কিস্তি। এই দুঃসময়েও এনজিওগুলো কিস্তির টাকার জন্য চাপাচাপি করছে। এনজিওকর্মীদের বিরুদ্ধে ঋণগ্রহীতাদের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ সরকার এই সঙ্কটকালে এনজিওগুলোকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সব ধরনের কিস্তি আদায় পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বলেছে। তারপরও এনজিওগুলোর এই তৎপরতায় মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, পাঁচ মাস আগে গত জানুয়ারি মাসে মাসিক কিস্তিতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার ঋণ নেন। তিনটি কিস্তি পরিশোধ করার পরেই লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। এপ্রিল ও মে মাসে ঋণের কিস্তির জন্য চাপ না দিলেও জুন মাসের কয়েকদিন গেলেই তাকে অফিসে গিয়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য মুঠোফোনে কল দিয়ে চাপ দেয় সংশ্লিষ্ট কিস্তি গ্রহীতা গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়োজিত অফিসার। এতে তিনি কিস্তি দিতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তাদের চাপ ও এক ধরনের হুমকিতে বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিস্তি পরিশোধের জন্য ঋণ নিয়েছেন।
অপরদিকে রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের খালেদ জানান, গত বছর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন কিস্তিতে পরিশোধের জন্য। মাসিক কিস্তি হিসেবে ৪৪ কিস্তিতে গ্রামীণ ব্যাংকের লভ্যাংশসহ পরিশোধের শর্তে এ ঋণ নেন তিনি। ইতিমধ্যে ১০ কিস্তি পরিশোধ করেছেন। মার্চ মাসে দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হলে সরকারি নির্দেশনায় কিস্তি নেয়া স্থগিত হয়। জুন মাসের ১০ দিন যেতে না যেতেই গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ফোন করে তাকে জুন মাসের কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে।
তিনি বলেন, ব্যবসার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। যার ১০টি কিস্তি পরিশোধ করেছি। এর মধ্যে মার্চ মাসের কিস্তিও পরিশোধ করা হয়েছে। মার্চ মাসের মাঝখানে সারাদেশে লকডাউন ছড়িয়ে পড়লে আমার মাছ ব্যবসায় ধস নামে। প্রতিমাসেই তার মোটা অংকের লোকসান হচ্ছে। সন্তানদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনই কষ্টকর হচ্ছে।
তিনি জানান, কয়েকদিন আগে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ফোন দিয়ে আমাকে কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। এই মুহূর্তে কিস্তি পরিশোধ করার মতো আর্থিক অবস্থা নেই। তাই তাদেরকে বলেছি সরকার কিস্তি পরিশোধের জন্য স্বাভাবিক সময় ঘোষণা করলে এবং আমার ব্যবসা স্বাভাবিক হলে তখন থেকে কিস্তি দিতে পারবো। বর্তমানে কিস্তি দেয়া সম্ভব নয়।
জানা গেছে, এলাকার বহু অসহায় নারী-পুরুষ কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন। সরকার লকডাউন তুলে নিয়েছে এমন খবরের পরপরই কর্মহীন ঘরবন্দী মানুষের মাথার ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি। লকডাউন পরিস্থিতির শুরুতে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখির পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে কিছু দিন কিস্তি আদায় বন্ধ রাখলেও জুনের শুরুতে সরকারি ছুটি উঠিয়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনজিওগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে কিস্তি আদায়ের জন্য। তারা তাদের মাঠকর্মীদের ঋণের টাকা আদায়ের জন্য মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। আর মাঠকর্মীরাও চাকরি বাঁচাতে কিস্তির টাকার জন্য গ্রাহকদের নানাভাবে চাপ দিচ্ছে এবং নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
রিকশাচালক মোস্তাহিদ মিয়া বলেন, এই সময়েও প্রতি সপ্তাহে এক হাজার টাকা করে এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। বর্তমানে আয় নেই। তাই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে নিয়মিত এনজিওর কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করব, তা বুঝতে পারছি না।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন