কর্মী ছাটাইয়ের প্রতিযোগীতায় নেমেছে ইউরোপের শীর্ষ কোম্পানিগুলো!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনার ভয়াবহতার কারণে এয়ারলাইনস ও অটোমোবাইলসহ শীর্ষ কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে, তাতে ইউরোপজুড়ে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু এপ্রিল মাসেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ৩ লাখ ৯৭ হাজার চাকরি হারিয়েছে বলে জানিয়েছে ইইউর স্ট্যাট এজেন্সি ইউরোস্ট্যাট।
এপ্রিলে ইউরোপে বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চে বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে বেকারের সংখ্যা এতটা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও বহু বছর দেখা যায়নি। ফারলং স্কিম (কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো এবং বেতনের একটি অংশ সরকার কর্তৃক প্রদান) ইউরোপে করোনায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু লোককে রক্ষা করলেও বাকিরা অসহায়ত্ত্বের মধ্যে আছে।
ইউরোপের যেসব শীর্ষ কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করছে-
ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (১০ হাজার কর্মী): বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা ও দাম দুটিই কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে কোম্পানিগুলোর ওপর। বিপাকে পড়েছে ব্রিটিশ তেল জায়ান্ট ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামও। সোমবার তারা ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার ঘোষণা দেয়।
মালবেরি (২৫ শতাংশ কর্মী): যুক্তরাজ্যের অভিজাত ফ্যাশন কোম্পানি মালবেরি তাদের ২৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করবে বলে জানিয়েছে। তাদের উৎপাদিত হ্যান্ডব্যাগ ও চামড়াজাত সামগ্রীর বিক্রি কমে যাওয়ায় এই পথে হাঁটতে যাচ্ছে তারা। বেশিরভাগ কর্মী ছাঁটাই হবে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক, যেখানে কোম্পানির অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ (১২ হাজার কর্মী): করোনার ভয়াল থাবা পড়েছে বিমান কোম্পানিগুলোর ওপর। লকডাউনের কারণে সব দেশের শীর্ষ বিমান কোম্পানিগুলোর ওপর বিরাট প্রভাব পড়ে এবং তাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে ওঠে। তাই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এপ্রিল মাসেই কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, ৪২ হাজারের বিশাল বহরের মধ্যে ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে।
ইজিজেট (৪ হাজার ৫০০): ব্রিটেনের অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল এয়ারলাইনস ইজিজেটও কর্মী ছাঁটাই করবে। তারা অন্তত ৪ হাজার ৫০০ কর্মীকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। তার মানে, কোম্পানিটি তাদের মোট কর্মীর ৩০ শতাংশই বাদ দিচ্ছে।
ভার্জিন আটলান্টিক (৩ হাজার কর্মী): ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারওয়েজের বাণিজ্যিক নাম ভার্জিন আটলান্টিক। তারা জানিয়েছে, ব্রিটেনে অন্তত ৩ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে এবং গ্যাটউইক এয়ারপোর্টে তাদের কর্মকান্ডের সমাপ্তি টানবে।
রিয়ানএয়ার (৩ হাজার কর্মী): আইরিশ বিমান কোম্পানি রিয়ানএয়ার তাদের ১৫ শতাংশ কর্মী (৩ হাজার) ছাঁটাই করবে।
রেনো (১৫ হাজার কর্মী) : ফরাসি অটোমোবাইল কোম্পানি রেনোর গাড়ি বিক্রি আগেই কমে গিয়েছিল। করোনাভাইরাস কোম্পানিটির জন্য নতুন আঘাত হয়ে আসে। তারা এখন টিকে থাকতে বিশাল কর্মী বাহিনী ছাঁটাই করবে। গত মাসে রেনো ঘোষণা দেয়, বিশ^ব্যাপী অন্তত ১৫ হাজার কর্মীকে বাদ দিতে হবে তাদের।
এয়ারবাস (১০ হাজার কর্মী): করোনাভাইরাসের কারণে বিমানের যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে, ফলে নতুন বিমান বিক্রিও কমে গেছে। ইউরোপের বিমান তৈরির কোম্পানি এয়ারবাসের আয় ভীষণভাবে পড়ে গেছে। তাই কোম্পানিটি ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
টুই (৮ হাজার কর্মী): অ্যাংলো-জার্মান বিমান ট্রাভেল ফার্ম টুই ১৩ মে জানিয়েছে, বিশ^ব্যাপী অন্তত ৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে তারা।
নিশান (২ হাজার ৮০০): জাপানি গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি নিশান জানিয়েছে, স্পেনের বার্সেলোনায় তারা তাদের কারখানাটি বন্ধ করে দেবে। এতে অন্তত ২ হাজার ৮০০ লোকের চাকরি যাবে।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এয়ারলাইনস (৫ হাজার কর্মী): মার্চ মাসে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এয়ারলাইনস জানিয়েছিল, তারা কিছু কর্মীকে সাময়িকভাবে বাদ দেবে। তবে পরের মাসেই তারা ঘোষণা দেয়, অন্তত ৫ হাজার কর্মী স্থায়ীভাবে ছাঁটাই করা হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন