কর্মীদের নামায বাধ্যতামূলক করার ‘বিপক্ষে’ আইনমন্ত্রী!
নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় সব কর্মকর্তা, কর্মচারীর জন্য অফিস চলাকালীন মসজিদে জামায়াতের সাথে যোহর, আছর ও মাগরিবের নামায পড়া বাধ্যতামূলক করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মুসলমানদের জন্য ফরয তথা অবশ্য পালনীয় এই ইবাদতের প্রতি গুরুত্বারোপের এই সিদ্ধান্তকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে সরকারী আমলারা।
এ ব্যাপারে বিবিসিসহ কয়েকটি ইসলামবিরোধী মিডিয়া আইনমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করলে তাদেরকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ ধরনের নির্দেশনাকে ‘সংবিধানবিরোধী’ বলে মন্তব্য করে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেছে, বাংলাদেশের আইন কেন? সংবিধানেই তো বলা আছে ধর্ম কারও ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। কোনো আইন দিয়েই এটা বাধ্যবাধকতা দেয়া যায় না।’
একই বিষয়ে আরও নেতিবাচক মন্তব্য করেছে, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু। তার বক্তব্য, কর্মীদের বাধ্যতামূলক নামাজ পড়ানোর ঘটনা বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করতে পারে। কারখানার ভেতরে এরকম আইন যদি তারা করেন, তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে।
গার্মেন্টসটির এ ধরণের নির্দেশনা বিষয়ে তথ্য নিয়ে জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক নোটিশে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাঞ্চ মেশিনে পাঞ্চ করতে হবে। যদি কোনো স্টাফ মাসে সাত ওয়াক্ত পাঞ্চ করে নামাজ না পড়েন তবে সেক্ষেত্রে তার বেতন হতে একদিনের সমপরিমাণ হাজিরা কাটা হবে।
এ সম্পর্কে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের এই কারখানার অপারেশন্সবিষয়ক পরিচালক মেসবাহ ফারুকী জানিয়েছেন, সবাই আমরা নামাজ পড়ি। আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, আমাদের নামাজ পড়া ফরজ। এখানে মুসলমান যারা আছেন, তারা সবাই নামাজ পড়েন। কিন্তু তারা নামাজ পড়েন বিক্ষিপ্তভাবে। কর্মীদের মধ্যে মতভেদ-দূরত্ব কমানোর একটি উপায় হিসেবে কারখানায় নামাজ বাধ্যতামূলক করার এই সিদ্ধান্ত।
‘আমাদের এখানে বিভিন্ন মতভেদের লোক আছে। এখানে একটা টিম হিসেবে কাজ করতে হয়। এখানে ফেব্রিক ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে নিটিং সেক্টরের হয়তো একটা সমস্যা থাকে। একেকজন একেকজনের ওপর দোষারোপ সারাদিন চলতেই থাকে। তো আমি এটার সমাধান হিসেবে চিন্তা করলাম তাদের যদি একসঙ্গে বসানো যায়, একসঙ্গে কিছু সময় যদি তারা কাটায়, তাদের মধ্যে দূরত্বটা কমবে।’
তিনি বলছেন, তার কাছে মনে হয়েছে মসজিদ ছাড়া একসঙ্গে বসানোর কোনো পন্থা তিনি খুঁজে পাননি।
ফারুকী তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বাস্থ্যগত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলছেন, সারাদিন বসে বসে কাজ করায় কোলেস্টেরল বাড়ছে, ডায়াবেটিস বাড়ছে। মসজিদ চারতলায় হওয়াতে কিছুটা ব্যায়ামও হচ্ছে।
নোটিশে একদিনের বেতন কাটার প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, এ পর্যন্ত কারোর বেতন কাটা হয়নি।’
মেসবাহ ফারুকী বলছেন, বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তারা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীকে নামাজ পড়তে বাধ্য করছেন না।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন