সাস নিউজ: হেফাজতে ইসলামপন্থি ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)’-এর দাবি মেনে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস বা মাস্টার্স ডিগ্রি সনদের আইন চূড়ান্ত করেছে সরকার। কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের পরিচালন/নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে (আল-হাইআতুল উলিয়া লিল-জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানসহ সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য রাখা হয়েছে বেফাক থেকে। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী একই সঙ্গে বেফাকের সভাপতি এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক।দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিগুলো ভিত্তি করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। খসড়ার ওপর মতামত দিতে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, ধর্ম, অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবের কাছে ওই তারিখ থেকে সাত দিনের সময় নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগে তৈরিকৃত খসড়া অনুযায়ী, পরিচালন কমিটির অধীনে ৬টি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হবে। এসব শিক্ষা বোর্ডের নাম দেওয়া হয়েছে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারাসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ।সূত্রমতে, সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যবিশিষ্ট এসব বোর্ডের পরিচালন কমিটিতে বেফাকের চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়াও ৫ জন সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া অন্য পাঁচটি বোর্ড থেকে পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান অথবা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত হয়ে ২ জন করে মোট ১০ জন সদস্য থাকবেন।পরিচালন কমিটি বা আল-হাইআতুল উলিয়ার প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। এই কমিটি নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিস এবং আরবি) সমমান বিবেচিত হবে।
এই কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দাওরায়ে হাদিসের সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার সময় নির্ধারণ, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল ও সনদ তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক বা একাধিক উপকমিটি গঠন করতে পারবে। এ কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ওই বিষয়গুলো অবহিত করবে।কওমি আইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কওমি মাদ্রাসা এবং দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ, মূলনীতি ও মত-পথের অনুসরণে মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইলমে ওহির শিক্ষাকেন্দ্র।
কওমি মাদ্রাসার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তার অর্থ একমাত্র আল্লাহর ওপর নিরঙ্কুশ ভরসা, রাসুলুল্লাহ (স) এর মতাদর্শ অনুসরণে জীবনযাপন; চার মাজহাবের প্রতি শ্রদ্ধা ও পরমতসহিষ্ণুতার সঙ্গে হানাফি মাজহাব অনুসরণ করা; আধ্যাত্মিক চার তরিকা (চিশ্তিয়া, সোহরাওয়াদিয়া, নক্শন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া ও কাদিরিয়া) সব হকপন্থি ধারার প্রতি সহনশীল ও উদার মনোভাব পোষণ করবে।স্বীকৃতির দাবিতে কওমি আলেমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফী ওই কমিশনের চেয়ারম্যান মনোনীত হন। কমিশন এক বছর ধরে আলোচনা, পর্যালোচনা ও জনমত যাচাই করে পরের বছর সরকারের একটি রিপোর্ট দাখিল করে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সরকার আগের খসড়া আইনটি বাতিল করে স্বকীয়তা অক্ষুণœ রেখে একটি গ্রহণযোগ্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এর পরই এই কমিশন বিলুপ্ত হয়।
এ ছাড়া আগের কমিটিতে সরকারের মনোনীত দুই কর্মকর্তাকে রাখা হয়।কিন্তু কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রথম খসড়ায় দারুল উলুম দেওবন্দের ৮টি ভিত্তি সংযোজনের দাবি, সরকারি কর্মকর্তা না রেখে এই কর্তৃপক্ষ গঠনের বিরোধিতা এবং বেফাক থেকে চেয়ারম্যানসহ একাধিক সদস্য রাখার দাবি করে আসছিল হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেফাক। তবে বেফাকের বাইরে থাকা অন্যান্য কওমি মাদ্রাসার নেতারা এই সরকারের আমলে দ্রুত আইনটি বাস্তবায়নের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করে ঐক্যবদ্ধ হন। হেফাজতে ইসলামের দাবির পূর্ণতা দিয়ে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করেছে সরকার।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন