এবার ইসরাইলের সাংস্কৃতিক চর্চায় নামল সৌদি রাজতন্ত্র!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি সরকারসহ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের কোনো কোনো আরব সরকার দখলদার ও বর্ণবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়াকে এবার কথিত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও টেনে এনেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মার্কিন সরকার যখন ইহুদিবাদী ইসরাইলকে শক্তিশালী ও ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনকে পদপিষ্ট করতে বর্ণবাদী ডিল অফ দ্য সেঞ্চুরি বা শতাব্দির কথিত সেরা পরিকল্পনা নামক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে তখন পাশ্চাত্য ও ইসরাইলের সেবাদাস প্রকৃতির এই আরব সরকারগুলো কথিত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ইসরাইলের দাসত্ব শুরু করল।
এর আগে এই আরব সরকারগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে গোপনে সহযোগিতা করে এসেছে। ১৯৯০’র দশকে এ লক্ষ্যে ওমান ও কাতারে খোলা হয় ইসরাইলি বাণিজ্য দপ্তর। আরও আগে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্যে নতজানুমূলক রাজনৈতিক আপোষ-চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল মিশর ও জর্দান। আর আরব বিশ্বের বাইরে তুরস্কের সঙ্গেও ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রায় সব ধরনের সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল ও তা এখনও বজায় রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি, আমিরাতি এবং ওমান সরকারের মাখামাখি বা ঘনিষ্ঠতাও সবার চোখে ধরা পড়েছে। ২০১৮ সালে ওমান সফর করে ওমানের তৎকালীন সুলতানের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার ইসরাইলের পক্ষে বক্তব্য রেখে ও ইহুদি ধর্ম আর ইসরাইলকে একই অর্থবোধকরূপে দেখিয়ে তার আসল চেহারা প্রকাশ করেছে। ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় রিয়াদ এবার ‘উম্মে হারুন’ বা ‘হারুনের মা’ নামক একটি টেলিভিশন সিরিয়াল সম্প্রচার শুরু করেছে সৌদি মালিকানাধীন টেলিভিশন এম বি সি-তে।
এই সিরিয়ালে গত শতকের চল্লিশের দশকে কুয়েতের কোনো কোনো ইহুদির ওপর কোনো কোনো মুসলমানের নির্যাতনের কথিত কাহিনী প্রচার করে পরোক্ষভাবে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্বকে বৈধতা দেয়ার এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা ও তাদেরকে বিতাড়ণের অপরাধগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এ ছাড়াও ইসরাইলের অবৈধ অস্তিত্বকে বৈধ ও বাস্তব হিসেবে তুলে ধরা এবং ফিলিস্তিনি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রচার করা হচ্ছে সৌদি কমেডি সিরিজ ‘মাখরাজ-সাত’। এ দুই সিরিজেই ফিলিস্তিনিদের ত্যাগ ও কুরবানিকে পদদলন করা হয়েছে।
পরিহাসের বিষয় হল পবিত্র রমজান মাসে এইসব সিরিয়াল সম্প্রচার শুরু হয়েছে যে রমজানের শেষ শুক্রবারকে পালন করা হয় মুসলমানদের প্রথম কিবলাকে ইসরাইলি দখল থেকে মুক্ত করার জন্য বিশ্ব কুদস দিবস হিসেবে। এ দিবসে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধেও বৈশ্বিক গণ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়!
নেতানিয়াহুসহ সন্ত্রাসী কোনো কোনো ইসরাইলি নেতা দাবি করেন যে আরব বিশ্বের জনগণকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে বিদ্বেষমূলক নানা প্রচারণার মাধ্যমে ক্ষেপিয়ে রাখা হয়েছে যা আরব-ইসরাইল শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা!
এখন সৌদি সরকার ইতিহাস বিকৃত করে ও জনগণের তেল-বিক্রির অর্থ খরচ করে ইসরাইলের নেতানিয়াহুদের পক্ষ নিয়ে কথিত সাংস্কৃতিক প্রচারণা শুরু করেছে। ফলে আরব বিশ্বের জনমত এখন সৌদি সরকারের ওপর মহা-ক্ষিপ্ত। সৌদি সরকার এমন সময় ইসরাইলের পক্ষে এই সেবা-কার্যক্রম শুরু করল যখন ইসরাইল চলতি বছরের জুলাই মাসে পশ্চিম তীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশকে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। আসলে সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকার এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি ইসরাইল ও মার্কিন সরকারের সেবাদাসত্বে নিয়োজিত।
-পার্সটুডে
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন