এপ্রিলে ব্যাংক খাতে ধ্বস, মূলধন নিয়ে শংকা
নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান ছুটি বা লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। থমকে গেছে জাতীয় অর্থনীতির চাকা। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঋণ আদায় ও নতুন বিনিয়োগ সংকটে পড়েছে ব্যাংক খাত।
ফলে গত মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনায় ধস নেমেছে। কিছু ব্যাংকের আয় অর্ধেক এবং বাকি ব্যাংকগুলোর আয় তিন ভাগের একভাগ এমনকি পাঁভাগের একভাগে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির চাকা এভাবে আরো কিছুদিন বন্ধ থাকলে অনেক ব্যাংকের মূলধন ভেঙে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ব্যাংকের পরিচালন আয় গত এক মাসে যেভাবে কমেছে তা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক বাঁচানোই দায় হয়ে যাবে।
বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্চ মাসে পরিচালন আয় ছিলো ১৬০ কোটি টাকা। লকডাউনের প্রভাবে এপ্রিল মাসে তা মাত্র ৮০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। পূবালী ব্যাংকের মার্চে ছিল ৭২ কোটি টাকা, এপ্রিলে আয় হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা।
প্রাইম ব্যাংকের আয় মার্চে ছিল ৬০ কোটি টাকা, এপ্রিলে সেটা মাত্র ২০ কোটি টাকা অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের মার্চে আয় ছিল ৫৬ কোটি টাকা এপ্রিলে ১০ কোটি টাকা বা প্রায় পাঁচ ভাগ কমেছে। ব্যাংক এশিয়ার মার্চে ছিল ৭০ কোটি এপ্রিলে ৩৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন আয় মার্চে ছিল ৫৩ কোটি টাকা, এপ্রিলে আয় হয়েছে ২২ কোটি টাকা। ওয়ান ব্যাংকের আয় মার্চে যা ছিল তার চেয়ে চারভাগ কমেছে এপ্রিলে। ব্যাংকটির মার্চে আয় ছিল ৫০ কোটি টাকা, এপ্রিলে হয়েছে ১০ কোটি টাকা। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের মার্চে আয় ছিল ৬৩ কোটি টাকা, এপ্রিলে ১৮ কোটি টাকা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মার্চে আয় ছিল ৪০ কোটি টাকা, এপ্রিলে হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আয় ৭২ কোটিা টাকা থেকে কমে ২৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। উত্তরা ব্যাংকের আয় মার্চে ছিল ৪২ কোটি টাকা, এপ্রিলে ২১ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মার্চে ছিল ৪২ কোটি টাকা, এপ্রিলে তা ২০ কোটি টাকায় নেমেছে।
এনসিসি ব্যাংকের ৬৫ কাটি টাকা থেকে কমে ৩১ কোটি, আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের আয় মার্চে ৭০ কোটি টাকা ছিল, এপ্রিলে হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংকের আয় ৬৩ কোটি টাকা থেকে কমে ৩০ কোটি টাকা হয়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মার্চ মাসের আয় ৫১ কোটি টাকা হলেও এপ্রিলে তা ১৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকের পরিচালন আয় থেকে কর্পোরেট কর প্রদান, ঋণমানের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ এবং যাবতীয় খরচ বাদ দিলে ব্যাংকের নিট আয় থাকে। এই আয়র ওপরেই একটি বাণিজ্যিক সফলতা নির্ভর করে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গত কয়েক মাস সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ। এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। রেমিটেন্স আসছে না। ঋণের টাকা আদায় হচ্ছে না। পরিস্থিতি এখন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। শুধু পরিচালন আয় নয়, এবার মূলধনেও আঘাত আসবে বলে আমরা আশংকা করছি।
একই রকম ভাষ্য যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, একক মাসের হিসাবে পরিচালন আয় কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এটা আমার ব্যাংকিং জীবনে প্রথম ঘটনা।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন