এখনও ডাবল ডিজিটের সুদ ৩০ ব্যাংকে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকের আমানতে ৬ ও ঋণে হবে ৯ শতাংশ সুদহার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এমনই ঘোষণা দিয়েছিলেন বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপকরা। কিন্তু কমেনি সুদহার উল্টো বেড়েছে। এ নিয়ে গত দেড় বছর ধরে চলছে নানা আলোচনা।
ব্যাংকগুলো এটি বাস্তাবায়নে সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনও ১০ শতাংশের ওপরে ঋণের সুদ আদায় করছে বেশিরভাগ ব্যাংক। ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৪ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে রাখার নির্দেশনা থাকলেও অনেক ব্যাংকই তা মানছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাস শেষে ৩০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের সুদহার ১০ শতাংশের বেশি আদায় করছে। আর ২৯টি ব্যাংকের স্প্রেড ৪ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। আক্টোবর শেষে ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। অনেক ব্যাংক এখনও স্প্রেড নিচ্ছে ৮ শতাংশের ওপরে।
তারল্য ব্যবস্থাপনার ওপর বাড়তি চাপকে কেন্দ্র করে সুদহার বাড়তে থাকায় তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৩০ মে এক নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রকার ঋণের সুদহার ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করছে। ঋণের সুদহার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। তাই সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে ভোক্তা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে স্প্রেড ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। আগে যা ৫ শতাংশ ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্প্রেড হার সবচেয়ে বেশি রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের। ব্যাংকটি আমানতের বিপরীতে গড়ে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণে সুদ নিয়েছে ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ। ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আমানতের বিপরীতে গড়ে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণে সুদ নিয়েছে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ দিয়েছে ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ আর ঋণের বিপরীতে নিয়েছে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
গত অক্টোবর শেষে ব্যাংকগুলো গড়ে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। আর ঋণ বিতরণ করেছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ সুদে। এতে করে স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশীয় পয়েন্ট।
অক্টোবরে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ১ দশমিক ৭৫, বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৬ দশমিক ৩১ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ।
এদিকে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে গত ১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নির্দেশনায় সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়, যা ১০ ডিসেম্বর শেষে হয়। কমিটি আজকে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিভিন্ন সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে সুদহার কমানোর করণীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন