একবিংশ শতকে চীন-নেপাল সম্পর্কের উন্নয়ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১৯৬০ সালের এপ্রিলে চীন ও নেপালের মধ্যে ট্রিটি অব পিস অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ স্বাক্ষরিত হয়, যেটা দুই দেশের বহু বছরের শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি। চীন একটি বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে উন্নীত করতে চায়, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশটির উন্নয়ন থেকে শিখতে চায় নেপাল।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো চীন আর নেপাল কিভাবে তাদের সম্পর্ককে একবিংশ শতকে এগিয়ে নিতে পারে? নেপালের প্রতি চীন সরকার যে মনোভাব দেখিয়েছে, সেটা ব্যতিক্রমী কিন্তু এখনও বহু কিছু করার রয়েছে। নেপাল কি চীনের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সিংহদুয়ার হয়ে উঠতে পারে না?
প্রথমত, দুই দেশ নেপালের জন্য আরও বেশি বাণিজ্য রুট খুলে দিতে পারে। এ জন্য সবচেয়ে বড় সাহায্য করবে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)। লাসা থেকে কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত ট্রেন চালুর বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যদিও অধিকাংশ নেপালি ঋণের ফাঁদে পড়ার ভয় পাচ্ছে। নেপাল সরকার এবং নেপালের মিডিয়াকে এই ভুল ধারণা ভাঙতে হবে। নেপালের আকাঙ্ক্ষা হলো ভারতের উপর নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা আর এ ক্ষেত্রে একমাত্র সাহায্য করতে পারে চীন।
দ্বিতীয়ত, নেপাল থেকে চীনে যে পরিমাণ মানুষ যায়, সে সংখ্যাটা সামান্য। এর কারণ হতে পারে ভিসা প্রসেসিংয়ের জটিলতা এবং চীনে নেপালিদের জন্য কাজের অভাব। ভারতে প্রায় লক্ষাধিক নেপালি অবস্থান করছে এবং কাজ করছে, তবে চীনের ক্ষেত্রে সেটা একই রকম হবে না। চীন যদি ভিসা প্রসেসিং পদ্ধতি সহজ করে এবং নেপালিদের জন্য সেখানকার কর্মবাজারকে খুলে দেয়, তাহলে নেপালের যাতায়াত সেখানে অনেক বেড়ে যাবে। এটা হলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে এবং একটা নেপালের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও ভূমিকা রাখবে। নেপালের পেশাদারদের চীনের মূল ভূখণ্ড এবং হংকংয়ে কাজ করার অনুমতি দেয়া উচিত। চীন হয়তো নেপালিদের চীনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান এবং কাজ করতে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে। এ ব্যাপারে চেংদুতে নেপালের কনস্যুলেট চালুর ইচ্ছাটি বিবেচনা করতে পারে চীন।
তৃতীয়ত, নেপাল চীনের এক-চীন নীতিকে সমর্থন করে এবং নেপালের মধ্যে চীন-বিরোধী কোন কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে চীনা সেনাবাহিনীতে গুর্খা রেজিমেন্ট গড়ে তোলা। এই শুধু দুই দেশের নয়, দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। চীন নিজেদের গুর্খা রেজিমেন্ট গড়বে আর নেপাল আশ্বস্ত থাকবে যে, বিপদের সময় চীনকে পাশে পাবে তারা।
চতুর্থত, বিনোদন শিল্প জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে এবং অন্য দেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নও করতে পারে। চীনও এজন্য নেপালের সাথে বিনোদন সেবা শুরু করতে পারে। নেপালে চলচ্চিত্রের শ্যুটিং করা থেকে শুরু করে চীনা চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন এবং সিনেমা হলগুলোতে চীনা ভাষার চলচ্চিত্র দেখানো শুরু করতে পারে। একই ভাবে নেপালি চলচ্চিত্রগুলোও দেখানো হবে চীনা সিনেমা হল এবং টেলিভিশনে। জনগণের মাঝে সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে এটা।
পঞ্চমত, চীন ও নেপালের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুই দেশেই একে অন্যের ভাষা শেখানোর জন্য স্কুল চালু করা হয়েছে। এখন দুই দেশের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিনিময় বাড়ানো দরকার। চীন নেপালে তাদের বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা খুলতে পারে। দুই দেশের সাহিত্যও দুই ভাষায় অনুবাদ হতে পারে। সম্পর্ক উন্নয়নে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ষষ্ঠত, জলবিদ্যুৎ এবং অন্যান্য বাণিজ্য খাতে নেপালে বিনিয়োগ করছে চীন। কিন্তু একই সাথে চীন নেপালে তাদের ব্যাংক, আইটি কোম্পানি, সেবা খাতের কাজকে প্রসারিত করতে পারে। আলিবাবা কেন নেপালে আলিপে চালু করবে না? দুই দেশের জন্যই সেটা ‘বড় পরিবর্তন’ নিয়ে আসবে। চীন কি নেপালের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করতে পারে না?
সপ্তমত, চীন ও নেপালের উচিত একে অন্যকে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রমোট করা। এ জন্য সিনহুয়া, এসসিএমপি, সিআরআই, সিসিটিভি, সিচুয়ান টিভি ও রেডিও, নেপাল টেলিভিশন ও অন্যান্য মিডিয়া হাউজকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সবশেষে, সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খেলাধুলা কূটনীতি এখন গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। ভারত সম্প্রতি নেপালের একটি স্পিন বোলারকে দলে নিয়েছে এবং এটা দুই দেশের সম্পর্ককে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। চীনও বড় বড় টুর্নামেন্টে নেপালি খেলোয়াড়দের নিতে পারে। পাশাপাশি নেপালের স্পোর্টস খাতে বিনিয়োগও করতে পারে চীন। বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট অবকাঠামো গড়ায় সহায়তা করতে পারে তারা, যেগুলোর কারণে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন