ইভিএম থেকে সরে আসুন : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছন, যেখানে জনগণের ভোটের সরকার থাকে না, সেখানে দুর্বৃত্তদেরই জয়জয়কার থাকে। সংশ্লিষ্ট সকলের আপত্তি সত্ত্বেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় বেপরোয়া দুর্বৃত্তপনারই বর্ধিত প্রকাশ।
‘আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি যে, ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের পথ থেকে এখনই সরে আসুন। অন্যথায় পদত্যাগ করুন। তা না হলে আপনাদের মাস্টার প্ল্যানের নির্বাচনের বিরুদ্ধে জনগণ সমুচিত জবাব দেবে।’
রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মলেনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের বংশধররা বাদে দেশের নিবন্ধিত প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ঘোরতর আপত্তি সত্ত্বেও জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত ও অর্থ হরিলুটের জন্য ইভিএম দিয়ে ভোট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
শুধু রাজনৈতিক দল নয়, ইসির টেকনিক্যাল কমিটি, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠনসমূহ, দেশের সচেতন মহল ও একজন নির্বাচন কমিশনারের বর্তমান ইভিএম ব্যবহারে বিরোধিতা থাকলেও সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন তা আমলে নেয়নি। প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি টাকায় ইভিএম ক্রয় করে ভোটারদের ওপর জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেয়ার আয়োজন চলছে। আওয়ামী লীগের নির্লজ্জ মোসাহেব প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের ইভিএম ব্যবহারের মূল লক্ষ্য অর্থ লুটপাট ও মিডনাইট সরকারের প্রার্থীদের ডিজিটাল ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বানিয়ে দেয়া।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র আড়াই হাজারের মতো। ভোটকক্ষ প্রায় ১৪ হাজার। কিন্তু গত ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, নির্বাচনে ৩৫ হাজার ইভিএম ব্যবহার করা হবে। অতিরিক্ত ২১ হাজার ইভিএম কোথায় ব্যবহার করা হবে? অতিরিক্ত ইভিএম প্রস্তুত রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো ভোটের আগেই ফলাফল প্রস্তুত করা। এটি সম্পূর্ণরূপে রহস্যজনক। এছাড়া ইভিএমে জালিয়াতি যে সম্ভব, এটি পৃথিবীর দেশে দেশে প্রমাণিত হয়েছে।
রিজভী বলেন, ২৯ ডিসেম্বর রাতের ভোট ডাকাতির কেলেঙ্কারিতে অস্বস্তিতে পড়ে এখন ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল ভোট ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নীরবে, নিঃশব্দে জনগণের ভোটাধিকার হরণের অপর নাম ইভিএম। সারাবিশ্বে বাতিল হওয়া ভোটাধিকার হরণের যন্ত্র ইভিএমে ভোট করার পথ থেকে এখনই সরে আসার জন্য আমরা ইসির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতির সামনে ইভিএম নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করতে চাই। বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, এ মেশিনে ডিজিটাল ভোট ডাকাতি করা যায় খুবই সহজে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ইভিএম মেশিনগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। কেউ ইচ্ছা করলেই অন্যের ভোট সহজেই দিতে পারবেন। এখন অধিকাংশ ভোটকক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের হাতে। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের সবাই সরকারি কর্মকর্তা। সুতরাং সরকারের হুকুমেই তাদের কাজ করতে হয়। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকে সরকারি দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট নামের ক্যাডার বাহিনী। তারাই পেটোয়া বাহিনীর সহযোগিতায় বের করে দেয় বিএনপি বা প্রতিপক্ষ দলের এজেন্টদের। ভোটকক্ষে ভোটারের ফিঙার প্রিন্ট নেয়ার পর গোপন কক্ষের ব্যালট ইউনিটের কনফার্ম বাটনটি চাপেন হয় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নয়তো সরকারি দলের পোলিং এজেন্ট। ফলে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটদানের স্থায়ী সুযোগ হারাচ্ছেন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন