ইংরেজি অক্ষরে বাংলা বই প্রকাশ করে সমালোচনার মুখে মিত্র অ্যান্ড ঘোষ
সাস নিউজ ডেস্কঃ মোবাইলের টেক্সট মেসেজ ও ইন্টারনেটে অনেকেই ইংরেজি অক্ষরে ব্যবহার করে বাংলা লেখেন। যারা বাংলা লেখার বিভিন্ন সফটওয়ার ব্যবহার করতে পারেন না তারাই মূলত এভাবে এসএমএস বা ইমেইলে কথোপকথন চালিয়ে যান।
কিন্তু শুদ্ধতাবাদী অনেক মানুষ এর তীব্র সমালোচনা করে আসছেন। অভ্রের মত সহজে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়ার থাকতে কেউ ইংরেজিতে কেন বাংলা লিখবেন, তা তারা বুঝতে পারেন না। তাদের দাবি, বাংলা বর্ণমালা দিয়েই বাংলা লেখতে হবে।
এর মধ্যেই, ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখার বিতর্কে ঘি ঢালল কলকাতার বিখ্যাত প্রকাশনী সংস্থা মিত্র অ্যান্ড ঘোষ।
এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে তাদের নতুনতম প্রকাশনা।
ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় ছোটদের জন্য লেখা কয়েকটি জনপ্রিয় বই প্রকাশ করেছে তারা। বাংলা অক্ষরে স্বাচ্ছন্দ্য নয় যে শিশুরা, মূলত তাদের কথা ভেবেই এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রকাশনীটি।
কিন্তু বাংলা ভাষা নিয়ে চর্চা করেন, এমন ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, এই উদ্যোগ সেখানকার শহরাঞ্চলের বাঙালিদের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি অনীহাই আরও বাড়িয়ে তুলবে। বাংলা অক্ষরের সঙ্গে পরিচিতিটাও মুছে যাবে শিশুদের।
অন্যপক্ষের বক্তব্য, ইংরেজি হরফ হলেও ভাষাটা তো বাংলাই। ফলে, বহু শিশু প্রথবারের মত আবোল-তাবোল, হাসিখুশি বা সহজ পাঠ-এর মত বিভিন্ন বই প্রথমবারের মত পড়ার সুযোগ পাবে।
ঝর্না দাস নামের একজন ক্রেতা আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেন, ‘মোবাইলের মতো লেখা এ বার বইয়েও! দারুণ ব্যাপার! বড়দির মেয়ে টরন্টোয় থাকে। বাংলা পড়তে পারে না। ওকে দেব এই বই।’
পত্রিকাটি জানিয়েছে, ইংরেজি হরফে আবোল-তাবোল, হাসিখুশি এবং সহজ পাঠের মোট ছয়টি খণ্ড প্রকাশ করেছে ‘মিত্র অ্যান্ড ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড’।
প্রকাশকের দাবি, নতুন প্রজন্মের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও ভিনদেশের পাঠকদের কাছে বাংলা সাহিত্যকে তুলে ধরতেই তাদের এই প্রচেষ্টা।
প্রকাশনা সংস্থাটির প্রধান সম্পাদক সবিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘অনেক কিশোর-কিশোরী বাঙালি হয়েও বাংলা বই পড়তে পারে না। তা ছাড়া, বাংলার বাইরেও বাংলা সাহিত্যের প্রচুর পাঠক রয়েছেন। তাদের সকলের কাছেই আমাদের সাহিত্যকে নিয়ে যেতে চাই।’
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েও সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা উদ্যোগ হিসেবে খারাপ নয়। তবে এতে কাজ কতটা হবে, বলতে পারি না। আজকাল ছেলেমেয়েরা অনেকেই বাংলা অক্ষর চেনে না। তাদের জন্য এটা ভালো। কিন্তু ইংরেজি অক্ষরে গল্প পড়ে তারা বাংলা ভাষা শিখে যাবে, এটা একটু কষ্টকল্পনা বলেই আমার মনে হয়।’
কবি জয় গোস্বামী আবার মনে করেন, ইংরেজি অক্ষরে বই প্রকাশের উদ্যোগ জনপ্রিয় হলে বাংলা ভাষার স্থায়িত্ব নিয়েই ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তার কথায়, ‘শুনে খুব অবাক লাগল, খুব উদ্ভট লাগল। এই উদ্যোগ সমর্থন পেলে বাংলা ভাষার স্থায়িত্ব নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ আছে বইকি।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘কোনো অভিভাবক যদি মনে করেন, তার সন্তানকে বাংলা সাহিত্য পড়াবেন, তা হলে কি তিনি বাংলা অক্ষর পরিচয় করিয়ে বাংলা ভাষায় আবোল-তাবোল পড়াতে পারেন না?’
ভাষাবিদ পবিত্র সরকার আনন্দবাজারকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে বলেন, ‘বইগুলো না দেখে এখনই কিছু বলা উচিত হবে না।’
কলকাতার আরেক প্রভাবশালী প্রকাশনী আনন্দ পাবলিশার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর মিত্র বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের কদর একেবারেই কমে যাচ্ছে না। আমরা কখনওই এই ধরনের বই প্রকাশ করব না।’
বাংলা শিশু সাহিত্যের বিখ্যাত প্রকাশনী দেব সাহিত্য কুটীরের কর্ণধার রূপা মজুমদার বলেন, ‘আমি এটা সমর্থন করতে পারব না। বাঙালি যদি ইংরেজি ও হিন্দি ভাষা শিখতে পারে, তা হলে মাতৃভাষাটাও শেখা সম্ভব।’
শিশু সাহিত্য সংসদের ডিরেক্টর চন্দনা দত্তের মত, ‘বিষয়টি আমার কাছে নতুন। যদি ভাবে বাংলা পড়ানো যায়, তা হলে ব্যাপারটা ভালো। এতে বাংলা ভাষার মৃত্যু হবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন