‘আয়-রোজগারহীন জনগণের ওপর করের বোঝা জুলুম’
নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউন আর সরকারী নানা বিধি-নিষেধে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দেশের জনগণ। সে সময়ে বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতে ট্যাক্স (কর) বাড়িয়ে দিয়েছে, যা আয়-রোজগারহীন মানুষের ওপর ‘জুলুম’ বলে উল্লেখ করেছেন মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
গতকাল শুক্রবার (১২ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী দেশের একজন ভিক্ষুকও টেলিযোগাযোগ ব্যবহার করে। এ কারণে সরকারকে ভাবতে হবে, অতিদরিদ্র ব্যক্তি বা পরিবার যারা বর্তমানে উপার্জনহীন তাদের কাছ থেকে উচ্চ কর আদায় করা কতটুকু সমীচীন হবে। এ সেবায় এমনিতেই নৈরাজ্য চলছে, তার ওপর অতিরিক্ত কর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে।
মহিউদ্দিন বলেন, এ কর অব্যাহত থাকলে সরকারের রাজস্ব না বাড়লেও একটি অপারেটর আরও অধিক নৈরাজ্য সৃষ্টি করে মুনাফা লুটবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক আঁতুড়ঘরে পৌঁছাবে। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আরোপিত কর বাতিল করা হোক। অন্যথায়, গ্রাহকরা বিকল্প পথে হাঁটলে তার দায়ও সরকারকেই নিতে হবে।
করের বোঝা চাপিয়ে সরকার মোবাইল খাতকে ক্রমেই দুর্বল করে তুলছে:
করের বোঝা চাপিয়ে সরকার মোবাইল খাতকে ক্রমেই দুর্বল করে তুলছে বলে অভিযোগ করেছেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.)।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, দেশে লকডাউনের কারণে এমনিতেই মানুষদের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, মোবাইল মাধ্যম হয়ে উঠেছে সব যোগাযোগের মূল চালিকা ও দেশ ডিজিটাল ইকনোমির দিকে এগিয়ে চলছে; ঠিক সে সময় এ ধরনের করের বোঝা কোনোভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এ বোঝা দরিদ্র মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়বে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে উঠবে যা লকডাউন সঙ্কটের কারণে আরও বাড়বে।
মোবাইলে কথা বলার বর্ধিত কর কর্তন শুরু:
এদিকে মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পরই মধ্যরাত থেকে এসএমএস, কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গ্রাহকের কাছ থেকে এই বাড়তি অর্থ নেয়া শুরু করেছে।
নতুন করহারে মোবাইল সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ১৫ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ ও সারচার্জ এক শতাংশ। ফলে মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
তাই প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জে সরকারের কাছে কর হিসেবে যাবে ২৫ টাকার কিছু কম, এতদিন যা ২২ টাকার মতো ছিল। বিশ্লেষকরা এবং কোম্পানিগুলো বলে আসছিল, মোবাইল সেবায় কর বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষ বেশি চাপে পড়বে।
দেশে মার্চ শেষে মোবাইল গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৩ লাখের বেশি।
মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, আগে ১০০ টাকা খরচ করলে সরকারকে ২১ টাকা ৫৭ পয়সা দিতে হতো। পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় এখন তা হবে ২৪ টাকা ৯৫ পয়সা। এই বাড়তি খরচ বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন