আমরিকাসহ ২০টি দেশের ১১০ কূটনীতিককে বহিষ্কার করলো রাশিয়া
সাস নিউজ ডেস্ক: ৬০ জন মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কারের সঙ্গেই সেন্ট পিটার্সবুর্গে মার্কিন কনস্যুলেট গুটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া। সেইসঙ্গেই বহিষ্কার করেছে জার্মানি, ইতালি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, কানাডাসহ উনিশটি দেশের ৫০ জন কূটনীতিককে।
তথাকথিত ঠান্ডা যুদ্ধের স্মৃতিকে উসকে দিয়ে সোমবার ৬০ জন রুশ কূটনীতিকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে গুটিয়ে দেন সিয়াটেলে রুশ কনস্যুলেটও। ইংল্যান্ডের স্যালিসবারি শহরে, প্রাক্তন রুশ গুপ্তচর সার্গেই স্ক্রিপল ও তার কন্যা ইউলিয়ার হত্যার চেষ্টার অভিযোগ তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন একইসঙ্গে তার শরিক হয় জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা থেকে ইউক্রেন— ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর বেশকিছু দেশ। পরে এই সংখ্যা বেড়ে যুক্ত হয় স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ।
মস্কো যে এই পদক্ষেপের কড়া জবাব দেবে, সেকথা জানিয়ে রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আগেই বলেছিলেন, পশ্চিমের এই আগ্রাসী আচরণকে মোটেই বরদাস্ত করা হবে না, আমরা শীঘ্রই এর জবাব দেব। বৃহস্পতিবার লাভরভ জানান, ৬০ জন মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করবে রাশিয়া। একইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে সেন্ট পিটার্সবুর্গে, ওয়াশিংটনের জেনারেল কনস্যুলেট। ঠিক যেমন পদক্ষেপ নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন যে ষাট জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল, তার মধ্যে ছিল ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাসে কর্মরত ৪৮ জন, আর নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘে কর্মরত ১২ জন। ওয়াশিংটন বন্ধ করে সিয়াটেলে রুশ কনস্যুলেট। পালটা, এদিন যে ৬০ জন মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়, তার মধ্যে ৫৮ জন মস্কোয় মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত, বাকি দু’জন ইকাটেরিনবার্গে কর্মরত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে ‘টিট-ফর-ট্যাট’ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেকথা জানাতে বৃহস্পতিবারই মস্কোয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হান্টসম্যানকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল রুশ বিদেশমন্ত্রকের দপ্তরে। উপবিদেশমন্ত্রী সের্গেই রিয়াকভ তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন ঠিক একই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, ৬০ জন মার্কিন কূটনীতিককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে এপ্রিলের ৫ তারিখের মধ্যে রাশিয়া ছাড়তে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গেই, রবিবারের মধ্যে সেন্ট পিটার্সবুর্গের কনস্যুলেট অফিস বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিন সকালে, স্ক্রিপলের বিষয়ে যে দেশগুলি একতরফা একপেশে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায় মস্কো। রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের জবাবে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রতিবাদপত্র, পাশাপাশি জানিয়ে দেওয়া হয় পালটা পদক্ষেপের কথা।
পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, আলবানিয়া, রোমানিয়া, ইউক্রেন, চেক সাধারণতন্ত্র, বেলজিয়াম, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মাসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, গ্রিস, আয়ারল্যান্ডের মতো ১৫টি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গেই কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয় রুশ বিদেশমন্ত্রকের দপ্তরে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাদে যে উনিশটি দেশের ৫০ জন কূটনীতিককে এদিন বহিষ্কার করা হয়, সেগুলি হলো: ইতালি (২), ফিনল্যান্ড (১), পোল্যান্ড (৪), লিথুয়ানিয়া (৩), নেদারল্যান্ড (২), লাতভিয়া (১), সুইডেন (১), এস্তোনিয়া (১), চেক সাধারণতন্ত্র (৩), জার্মানি (৪), ইউক্রেন (১৩), মলডোভা (৩), রোমানিয়া (১), নরওয়ে (১), স্পেন (২), ক্রোয়েশিয়া (১), ডেনমার্ক (২), আয়ারল্যান্ড (১) এবং কানাডা (৪)।
রাশিয়ার সিদ্ধান্তের জবাবে মার্কিন বিদেশদপ্তরের মুখপাত্র হিথার নাউয়ার্ট বলেছেন, ‘মস্কোর আসলে ভুক্তভোগীর মতো আচরণ করা উচিত নয়।’ তিনি বলেছেন, ‘একে কূটনৈতিক ইটের বদলে পাটকেল হিসাবে দেখছি না আমরা।’ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স জানিয়েছেন, রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যাবে। চার কূটনীতিক বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায় জার্মান বিদেশমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মোটেই ‘বিস্ময়কর নয়’ এবং ‘একে আদৌ হালকাভাবে নিচ্ছে না’ বার্লিন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরিসা মে’র পাশে দাঁড়িয়ে যে দেশগুলি রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এমন ২৫টি দেশের কূটনীতিকদেরও পালটা বহিষ্কারের কথা বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। শুরুতে ব্রিটেন ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল। পালটা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়াও সমানসংখ্যক ব্রিটিশ কূটনীতিক বহিষ্কার করে। এবং রাশিয়াতে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
দুদিন আগেই রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের জন্য ওয়াশিংটন ‘প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে’ বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন রুশ বিদেশমন্ত্রী লাভরভ। উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে লাভরভ বলেছিলেন, ‘স্ক্রিপলের বিষয়টি’ দেখিয়ে দিল পশ্চিমের এই প্রবল ব্ল্যাকমেইলের মুখে ‘আধুনিক বিশ্ব এবং আধুনিক ইউরোপে প্রকৃত অর্থেই স্বাধীন এমন খুব অল্পসংখ্যক দেশই টিকে আছে।’ সংবাদ সংস্থা তাসের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘যখন একজন-দুজন কূটনীতিককে সংশ্নিষ্ট দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে, তখন আমাদের কানে ফিসফিসিয়ে এসেছে তাদের অক্ষমতা প্রকাশ, দুঃখ প্রকাশ। আমরা নিশ্চিত, এটা প্রচণ্ড চাপ আর প্রবল ব্ল্যাকমেইলের ফসল, যা কি না আন্তর্জাতিক দুনিয়াতে ওয়াশিংটনের মুখ্য হাতিয়ার।’ তাসখন্দে লাভরভ যখন বলেছিলেন, ‘এই রঢ় আচরণকে কেউই বরদাস্ত করবে না, আমরাও না, আমরা এর জবাব দেব’, তখন মস্কোতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, পশ্চিমের এই সিদ্ধান্তের ‘তীব্র নিন্দা’ জানাচ্ছে রুশ সরকার, রাষ্ট্রপতি পুতিনের অনুমোদনের জন্য প্রত্যাঘাতের প্রস্তাব পাঠানোর আগে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ‘আমরা আগেই বলেছি, আবারও বলছি, এর (স্ক্রিপল হত্যার চেষ্টা) সঙ্গে রাশিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। আগের মতোই পালটা পদক্ষেপ নেওয়ার নীতিতে চলব আমরা।’
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন