৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার
২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার। কি পরিমাণ বিনিয়োগ, দক্ষ শ্রমিক, জমি ও জ্বালানি লাগবে তা এখনই হিসাব করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার সেন্টারে ডেইলি স্টার ও বিজিএমইএ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ মত দেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির বিবেচনায় এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত। তবে এক্ষেত্রে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস ও জমির সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার, উপযুক্ত কর্মপরিবেশের অভাব, ন্যায্যমূল্য দিতে ক্রেতাদের গড়িমসি। এগুলোকে মোকাবিলা না করতে পারলে বাধা হয়ে দাঁড়াবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে। এছাড়া বাংলাদেশে যেভাবে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হচ্ছে তা যেন প্রতিযোগী অন্যান্য দেশেও নিশ্চিত করা হয় সেজন্য ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বক্তারা। অন্যথায় প্রতিযোগী সক্ষমতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে বলে তারা মনে করেন।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সঞ্চালনায় ও বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন, বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শরিফ আস সাবের।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রম সচিব মিকাইল শিপার বলেন, ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির জন্য কি পরিমাণ দক্ষ শ্রমিক লাগবে আমাকে জানান, আমি এর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব। আমাকে এ সংখ্যা না জানালে আমি তো কিছুই করতে পারব না।
এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, পোশাক খাত সুশাসনে এগিয়ে। তবে রাজস্ব বিষয়েও আপনাদের আরো কমপ্লায়েন্ট হতে হবে। বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বন্ডের নামে পণ্য এনে স্থানীয় বাজারে ছেড়ে দিলে দেশের স্থানীয় বাজার ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সবচেয়ে বড় জ্বালা- জ্বালানি ও জমি। এই দুয়ের সংকটে শিল্পোদ্যোক্তারা বিনিয়োগবিমুখ হয়ে পড়ছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে বড় উদ্যোক্তারা পিছিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে না। এর সঙ্গে রয়েছে কারখানার জন্য জমির সংকট। তাই সরকারকে জ্বালানি ও জমির সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রফতানি করে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের জন্য মালিকপক্ষ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং। এ লক্ষ্যে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কী পরিমাণ গ্যাস, তেল ও দক্ষ জনশক্তি দরকার, তার পরিমাণ সরকারকে জানাতে হবে। তাহলে সরকার সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জাইকা দশমিক শূন্য ১ শতাংশ সুদে সরকারকে এই ঋণ দিলেও দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা তাতে ১০ শতাংশ সুদ আরোপ করেছে। এতে করে আমরা স্বল্প সুদে ঋণ পাচ্ছি না। এতে করে ঋণ দেয়ার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে সুদের হার ১ শতাংশ হলেও আমাদের দেশে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সুদের হার ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। ফলে উদ্যোক্তারা ঋণের সুফল পাচ্ছেন না।
বিজিএমইর প্রাক্তন সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপরও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও আমাদের দেশে কমছে না।
পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার তা কি বিদেশি বিনিয়োগ-এফডিআই ছাড়া সম্ভব? আপনারা (পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা) এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ চান না। আমার মনে হয় এফডিআই ছাড়া এই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ভালো কথায় দাম প্রভাবিত হয়- এমনটি আমি মনে করি না। তবে বাংলাদেশে যা বাধ্যতামূলক হচ্ছে তা বৈশ্বিকভাবে করা হলে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারব।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন