টাঙ্গাইলের সাথী পুতির কাজ করে স্বাবলম্বী
সাস নিউজঃ জেলার মধুপুর উপজেলার দড়িহাতীল গ্রামের সাথী পুতির ব্যাগ তৈরি করে এখন স্বাবলম্বী।
ওই উপজেলার দড়িহাতীল (তালুকপাড়া) গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম সাথী একটি উদাহরণ। সাথী আজ ঘরে বসে না থেকে আধুনিক যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে পুতির ব্যাগ তৈরি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। গ্রামের অন্য নারীকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য গড়ে তোলেছেন ‘সাথী পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুল’। সাথী সন্তান পালনের পাশাপাশি একদিকে রং-বেরংয়ের পুতি দিয়ে মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্টস (হাত ব্যাগ) ও ফুলদানি তৈরি করে বিক্রি করছেন অপরদিকে আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। পুতির ব্যাগ তৈরি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সাথী আজ অনেকটাই স্বাবলম্বী। তাকে আর স্বামীর কাছে হাত বাড়াতে হয়না। উল্টো তিনি স্বামীকেই অনেক সময় সহযোগিতা করতে পারেন।
মধুপুর থানা মোড় থেকে চাপড়ি রোডের তালুকপাড়া নামক পাকা রাস্তার পশ্চিম পাশে গোয়ালা বাড়িতে ‘সাথীর পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুল’ চোখে পড়বে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে পুতির ব্যাগের কাজ ও প্রশিক্ষণ। সুমাইয়া ইসলাম সাথীকে ঘিরে আঁখি খাতুন, আমিনা খাতুন, রাহিমা বেগম, নার্গিস আক্তার, হাজেরা বেগম, লিজা খাতুন, তানিয়া আক্তার, নুরজাহান বেগমসহ ১০-১৫ নারী কাজ করছেন। সাথী দেখিয়ে দিচ্ছে আর অন্য সে অনুযায়ী পুতি গাঁধছেন। তারা বেশিরভাগ ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির কাজ শিখছেন। কেউ পুতি গাঁধছেন, কেউ পাতলা কাপড় লাগাচ্ছেন। আবার কেউ ব্যাগের মধ্যে জিপার লাগাচ্ছেন।
‘সাথীর পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুলে’ গিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা সুমাইয়া ইসলাম সাথীর সাথে। সাথী জানান, ৫-৬ বছর আগে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে পুতির ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই ঘরে বসে কাজ শুরু করেন। এ কাজে আস্তে আস্তে সফলতাও আসতে থাকে। সাথীর এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন তার স্বামী শফিকুল ইসলাম। সে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঘাটাইল ও মধুপুর থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির সরঞ্জাম পুতি, প্লাস্টিকের সুতা, পাতলা কাপড় ও জিপার কিনে এনে দেন। তৈরিকৃত ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস আশপাশের গ্রামের মেয়েরা তা কিনে নেয়। অবশিষ্ট ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস মধুপুরের বিভিন্ন কসমেটিক্সের দোকানে পাইকারি বিক্রি করেন। প্রতিটি ভ্যানিটি ব্যাগ ৫শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা এবং প্রতিটি পার্টস ২শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়। খরচবাদে সাথীর প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
সুমাইয়া ইসলাম সাথী আরও জানান, পুতির ব্যাগের কাজ শিখলে নিজের সংসারও চলে অপরদিকে অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করাও সম্ভব। সাথীকে দেখে ঐ গ্রামের অনেক মেয়েরা আজ পুতির ব্যাগের কাজ শেখার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা অবসর সময়টুটু অবহেলায় না কাটিয়ে পুতির ব্যাগ তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন।
প্রশিক্ষণার্থী আবিদা সুলতানা আঁখি জানান, পুতির ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির কাজ শিখলে পরিবারের মেয়েদের ব্যাগের চাহিদা মিটবে। যা বাজার থেকে অধিকমূল্যে কিনতে হতো। তাছাড়া নিজে ব্যাগ তৈরি করতে পারি, এটা আতœীয়-স্বজনরা জানলে তারাও ব্যাগ তৈরি করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করবেন।
সাথীর স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, পর্দার মধ্যে থেকেও মেয়েরা অনেক কাজই করতে পারেন। কুটির শিল্পের কাজ কোন অংশেই অসম্মানের নয়।
ধামাবাশুরী নুরানী তালিমুল কোরআন মাদরাসার সহকারি শিক্ষক আব্দুল জলিল জানান, মেয়েদের অবহেলা না করে সাথী আক্তারের মতো কুটির শিল্পে কাজ করার সুযোগ দিলে অনেকেই সমাজে কল্যাণ বয়ে আনতে সক্ষম হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার জানান, ঘরে বসে না থেকে মেয়েদের সাথীর মতো ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে কাজ করা উচিৎ।
এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা আক্তার জানান, আজকের মেয়েরা বাবা বা স্বামীর সংসারের বোঝা নয়। তারা অনেকেই আত্মকর্মস্থানে নিজেদের নিয়োজিত করছেন। সাথীর মতো আতœনির্ভরশীল কাজ করলে সমাজ থেকে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতন অনেকটা কমে যাবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন