গ্যাসের দাম বাড়লে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক পোশাক কারখানা
নিজস্ব প্রতিবেদক: এলএনজি আমদানিকে সামনে রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কোম্পানির (বিইআরসি) কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। এর প্রেক্ষিতে হয়ে বিইআরসি থেকে হয়ে গেলো ৪ দিনব্যাপী গণশুনানী। গ্যাসের দাম বাড়ার এ সম্ভাবনায় ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিবাদ। শুধু আবাসিক নয় বাণিজ্যিক খাতেও বাড়ছে গ্যাসের দাম। এরকম আশংকায় চাপে পড়েছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প। এমনিতেই মজুরির চাপে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা চাপের মুখে আছেন, অভিযোগ করে তারা দাবি করছেন এর ফলে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক কারখানা।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত হারে গ্যাসের দাম বাড়ালে গার্মেন্টস খাত বিশেষ করে টেক্সটাইল কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। রানা প্লাজা ধ্বসের পর এ খাতে নতুন করে একটা বড় বিনিয়োগ করেছেন উদ্যোক্তারা। এর ফলে বেড়েছে ব্যাংক ঋণ। ব্যাংক সুদের হারের পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে না। এমন অবস্থায় পোশাক খাতের জন্য অন্যতম জরুরি এই গ্যাসের দাম বাড়লে বাড়বে উৎপাদন খরচ। উৎপাদন খরচ বাড়লে প্রতিযোগিতা সমতায় আমরা টিকে থাকতে পারবো না। ন্যূনতম মজুরির চাপে এমনিতে অনেক উদ্যোক্তা কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়লে বাকি কারখানাগুলোও নিজেদের ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা হারাবে বলে আমি মনে করি।
পোশাক মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএ এর সহসভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত হারে হারে গ্যাসের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে টেক্সটাইল কারখানাগুলো। বর্তমানে আমরা যে পরিমাণ সুতা উৎপাদন করছি তার খরচই উঠছে না। বিদেশি সুতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা টিকে থাকতে পারবো না। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ ভাগই আসে পোশাক শিল্প থেকে। জনগণের একটা বড় অংশের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর এমনিতে আমরা নানা প্রতিবন্ধকতাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর উপর যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় তাহলে কারখানা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।
এলএনজি আমদানি হতে থাকলে গ্যাসের দাম বাড়াতে সরকার বাধ্য থাকবে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এলএনজি আমদানি একটা দীর্ঘস্থায়ী ব্যয়বহুল পরিকল্পনা। এর আমদানি হতে থাকলে গ্যাসের দাম বাড়বেই। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে রপ্তানিযোগ্য খাতগুলোতে ভর্তুকিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া অব্যাহত রাখা। শুরু থেকেই আমরা বলছি ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে দিতে হবে বিভিন্ন সুবিধা না হলে দেশের অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে পরিচিত পোশাক শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আমরা আশংকা করছি।
এদিকে দেশে এখন দৈনিক মোট গ্যাস সরবরাহ প্রায় ৩২০ কোটি ঘনফুট, যার ৪০ শতাংশই বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত হয়। গ্যাসের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দাবি তুলবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এর ফলে গ্যাসের পর বিদ্যুতও গ্রাহককে কিনতে হবে অধিক মূল্য দিয়ে। এতে করে সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ীদেরও নাভিশ্বাস উঠে যাবে বলে মন্তব্য করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম। তাই তিনি আমদানী করা উচ্চ মূল্যের এলএনজি বদলে দেশের ভেতরেই গ্যাসের অনুসন্ধানে কূপ খননের জন্য বাপেক্সকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন