কোন রকম পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে না কাশ্মীরে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ছাত্ররা তিন মাস ধরে স্কুলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। অবেশেষে তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেইসাথে কঠিন শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে।
তাদেরকে স্কুলের ইউনিফর্ম পরতে বারণ করা করা হয়েছে, বরং তাদেরকে সাধারণ পোশাক পরতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ঘুর পথ ব্যবহার করতে, বিক্ষোভকারীদের এড়িয়ে যেতেও বলা হয়েছে। তাদের যদি স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে হয়, তবে এসব শর্ত পালন করতে হবে।
তাদের নিয়ে যেতে স্কুল থেকে বাস আসবে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আর কখনো পড়েননি আবদুল রহমান রাঠোর। তার মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের কোনো একটি স্কুলে।
রহমান নিজে সরকারি চাকুরে, তিনি তার মতো আরো হাজার হাজার লোকের মতো অফিসে যাচ্ছেন, তবে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি নয়।
৫ আগস্ট কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা ও এর রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করার সময় সরকার সেখানে কারফিউ জারি করে, লোকজনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে সরকারি কর্মীরা বেশ কয়েকবারই ক্রুদ্ধ তরুণদের হামলার শিকার হয়েছে। তারা সরকারি কর্মীদেরকে অভিযুক্ত করেছে রুটিন কাজে যোগদানের মাধ্যমে জনগণের আন্দোলনের সাথে বেইমানি করার জন্য।
রহমানের সহকর্মীদেরকে শ্রীনগর উপকণ্ঠে রাস্তায় তরুণদের একটি দল ধরে ফেলেছিল। তাদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে দেখা গেল যে হতভাগারা যাচ্ছে তাদের কাজে। পুরো দিন তাদেরকে দড়ি দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। তাদেরকে কোনো খাবার বা পানি দেয়া হয়নি।
বিশ্বের আর কোথাও এমন ঘটনা ঘটে না। ছাত্রদেরকে ইউনিফর্ম না পরে স্কুলে যেতে বলাটা আর ১০টা ঘটনার মতো দেখা উচিত নয়। এতে অনেক উদ্বেগ রয়েছে। কাশ্মীর কোন দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে ভাবতে হবে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কাশ্মীর সরকারের শিক্ষা বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, সরকার কাশ্মীর উপত্যকার বন্ধ থাকা স্কুলগুলো খুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলছে, ছাত্রদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনতে কৌশল বের করতে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা জানি না, কৌশলে কাজ হবে কিনা। ১০০ দিনের বেশি হওয়ার পরও যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, এটি তাই প্রকাশ করছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও সিনিয়র মাধ্যমিক মিলিয়ে আনুমানিক ১৪,৯৩৮টি স্কুল আছে।
২০০৪ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী কাশ্মীরে শিক্ষার হার ৬৫.৩৩ ভাগ। গত কয়েক বছরে সাক্ষরতার হার ধীরে ধীরে বাড়ছিল।
গত ৫ আগস্ট মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটির ওপর কারফিউ জারি করার পর থেকে হাজার হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী। স্বায়াত্তশাসন মর্যাদা বাতিলের ওই আদেশ জারির সময় রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেযা হয়, রাস্তায় রাস্তায় বিপুলসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করা হয়, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়, ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেয়া হয়।
এই অঞ্চলের লোকজন অফিসে যাওয়া, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো, দোকানপাট না খুলে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু না করার জন্য সর্বক্ষণ নির্যাতন করে যাচ্ছে ।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন