সরকার ক্রেতা সেজে লুটপাটকারীদের রক্ষা করছে -বাম জোট
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার ক্রেতা সেজে লুটপাটকারীদের রক্ষা করে চলছে। ঋণ খেলাপিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ব্যাংক গ্রাহক সাধারণ জনগণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক আলোচনায় সভায়। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট- উত্তরণের পথ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় রাজনীতিকদের পাশাপাশি অর্থনীতির শিক্ষক-গবেষকরাও বক্তব্য রাখেন ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ জুন ’১৯ পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। অর্থনীতির আয়তন অনুপাতে যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ রিশিডিউলড না করলে এর আকার দাঁড়াত দ্বিগুণ। সরকার ঋণখোলাপিদের শাস্তি না দিয়ে কনশেসন দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে, এর ফলে খেলাপি ঋণ না কমে ক্রমাগত বাড়ছে। এক অঙ্কের সুদের হারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমানতকারী, সুবিধা পাবে লুটেরা ধনী, ব্যাংক ডাকাত ও ঋণখেলাপিরা, বলেন তিনি।
নতুন ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, আর্থিক খাতের টালমাটাল অবস্থায়ও কেন নতুন ব্যাংক হচ্ছে? কারণ ব্যাংকে যে পরিমাণ লাভ হয়, অন্য কোনো খাতে এই পরিমাণ লাভ হয় না। গড় হিসেবে ব্যাংক খাতের লাভ ২০০ শতাংশ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত। সরকার ক্রেতা সেজে লুটপাটকারীদের রক্ষা করে চলছে। এই নীতি চলতে থাকলে এই অরাজকতা থেকে আর্থিক খাতকে রক্ষা করা যাবে না।
ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি ক্রিসেল’র সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, ব্যাংকের মোট টাকার মধ্যে পরিচালকদের হচ্ছে মাত্র ৫ শতাংশ আর আমানতকারীদের হচ্ছে ৯৫ শতাংশ। কিন্তু সকল সুবিধা নিচ্ছে ও কর্তৃত্ব করছে ওই ৫ শতাংশ মালিক পরিচালকরা। তারা গোটা ব্যাংকের মালিক সেজে বসে আছে। এটা কোনোভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে না, এটা মানা যায় না। এই বিষয়ে রাজনীতিকদেরই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমাতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই তিনের মেলবন্ধনেই খেলাপি ঋণের নষ্ট সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করেছে। এখন দেশের উন্নয়নের নীতিই হচ্ছে লুটপাট। আমাদের দেশের মন্ত্রীরা বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার কারণ হচ্ছে, এরা এখান থেকে লুটপাট করে, অর্থ-সম্পদ পাচার করে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ভালো রেখেছে। এই কারণে দেশের ব্যাংক-বীমা অর্থ খাত ধ্বংসকারী অর্থমন্ত্রী এক নম্বর অর্থমন্ত্রীর স্বীকৃতি পায়। সুন্দরবন তথা পরিবেশ ধ্বংস করে প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ এর পুরষ্কার পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকার লুটপাটকারীদের ৯% সুদে ঋণ দিতে আমানতকারীদের সুদের হার কমিয়েছে। দেশে যে উন্নয়ন হয় তার সুফল ভোগ করে ৫ ভাগ ধনীরা, সাধারণ জনগণের জন্য কোনো উন্নয়ন হয় না। উন্নয়নের সপক্ষে সরকার মাথাপিছু আয় বাড়ার যে তথ্য দিচ্ছে, তা নিয়ে ও প্রশ্ন তোলেন ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, গড় আয় দিয়ে জনণের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ধারণ করা একটা প্রতারণামূলক প্রক্রিয়া। এর মধ্যদিয়ে জনগণের বাস্তব অবস্থা আড়াল করা হয়।
তিনি বলেন, ভারতের করযোগ্য আয়ের নিম্নসীমা যেখানে ৬ লাখ টাকা আর আদায়কৃত করের পরিমাণ জিডিপির ২০ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশে করযোগ্য আয়ের নিম্ন সীমা আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, আদায়কৃত করের পরিমাণ জিডিপির ১০ শতাংশ মাত্র। এর মানে বাংলাদেশের করযোগ্য হিসেবে যাদের নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই ধনীরা কর দেয় না, কর দেয় গরিবরা।
বাংলাদেশে ৫ শতাংশ ধনীরা উন্নয়নের সব সুফল ভোগ করছে দাবি করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ধনী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ১৯ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ধনী বাড়ার হার বাড়লে গরিব বাড়ার হারও বাড়ে। অর্থনীতি আয় বৈষম্য এত বেশি যা এশিয়ার অনেক দেশ এর ধারে কাছেও নেই। সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় ছিল সাম্য প্রতিষ্ঠার। ফলে এই বৈষম্য আমাদের সংবিধানবিরোধী। তার মানে এই সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশ পরিচালনা করছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন