রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন-বিক্ষোভ
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, জামাত-জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ বিরোধী রাজারবাগ দরবার শরীফকে নিয়ে অব্যাহত মিডিয়া ক্যুর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট এবং সিআইডির ভুল তদন্ত প্রত্যাখান করে এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ উলামা পীর মাশায়েখ ঐক্য পরিষদ।
শনিবার (২০ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেন সংগঠনটি।
সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম মসজিদের প্রধান মুয়াজ্জিন আলহাজ্জ্ব মাওলানা ক্বারী কাজী মাসউদুর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পীর আউলিয়ার বংশধর। পীর সাহেবদের কারণেই বাংলাদেশে ইসলাম এসেছে এবং এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। কাজেই যারা পীর সাহেবদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়, পীরের কেরামতি দেখেন বলে বিষাদগার করে এবং পীর সিন্ডিকেট বলে ভিত্তিহীন নিউজ করে তারা এদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে যে মিডিয়া ক্যু চলছে তাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠী মর্মাহত। কারণ রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেব ১৯৭১ সালে ছাত্র অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা করেছেন। উনার আপন ভাই ও চাচাতো ভাইরাও মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। পীর সাহেবের মেজ ভাই হাফিজুর রহমান হারুণ সেক্টর-২ এর অধীনে ক্র্যাক প্ল্যাটুনের একজন গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন জামাত-জঙ্গীবাদ বিরোধী হক্ব দরবার শরীফ, রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যথাযর্থ ব্যবস্থা নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা বাতাকান্দি রহমাতুল্লিল আলামীন দরবার শরীফের পীর আল্লামা শায়খ খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দী বলেন, গত ১৬ নভেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠের লিড নিউজে বলা হয়েছে- আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০০১-এর আদলে প্রশাসন সাজাতে উঠে পড়ে লেগেছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক জোট। চলতি বছর ১১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।
কুমিল্লা পাতাকান্দি রহমাতুল্লিল আলামীন দরবারের পীর সাহেব ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আল্লামা শায়খ খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দী আরো বলেন, আগামী নির্বাচনে জামাত তার সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে। সে কারণে এখন থেকেই জামাত রাজারবাগ শরীফসহ হক্ব পীর সাহেবদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। জামাত-জঙ্গীবাদ বিরোধী প্রখ্যাত পীর সাহেব, ঢাকা রাজারবাগ শরীফের পীর সাহেবের বিরুদ্ধে জামাত প্রভাবিত সিন্ডিকেট যেভাবে মিডিয়া ক্যু করছে তা গভীর নিন্দার। জামাত যাতে সুদুর-প্রসারী ষড়যন্ত্র করে হক্ব পীর সাহেবদের সুনাম ক্ষুন্ন না করতে পারে এজন্য সরকারকে এখনই বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ধর্ম সম্পাদক আলহাজ্জ্ব মাও. খলীলুর রহমান সরদার বলেন, জামাত-জঙ্গীবাদ বিরোধী হক্ব দরবার শরীফ, রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে মিডিয়া ক্যু করে দেশের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থক, শ্রদ্ধাভাজনদের হৃদয় থেকে তাকে দূরে সরানো যাবেনা।
বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ ঐক্যজোটের সভাপতি মুফতী মাও. আব্দুল হালিম সিরাজী বলেন, মিডিয়াতে ‘তাকিয়াভিত্তিক’ কাজ করছে জামাত শিবির চক্র। তাকিয়া পদ্ধতি মূলত জামাত শিবিরের একটি সাংগঠনিক পন্থা। এই পদ্ধতিতে ভিন্ন দলের মাঝে বিশেষ করে তাদের বিপরীত মতাদর্শ অন্যদলের অঙ্গ সংগঠনে ঢুকে জামাত শিবির নিজেদের রাজনীতি স্বার্থসিদ্ধি করে। বিভিন্ন প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠানে এদের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। যেমন- বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও পত্রিকাতে ‘তাকিয়া’ ভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে এরা। ঠিক এ রকম পাকাপোক্ত হওয়ার কারণে এরা বড় ধরনের সামাজিক আন্দোলন করতে চায় এবং এটাই স্বাধীনতা বিরোধী এই অপশক্তির মূল লক্ষ্য। আর পাশাপাশি তাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের জন্য যে ফাঁসি দেয়া হয়েছে তার প্রতিশোধ নেয়া।
মুফতী মাও. আব্দুল হালিম সিরাজী বলেন, মিডিয়ায় অনুপ্রবেশ করা এসব জামাতী রিপোর্টারাই রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে অব্যাহত মিডিয়া ক্যু চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকী তারা হাইকোর্ট এবং আইনমন্ত্রীর নামেও রাজারবাগ শরীফকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করে মিডিয়া ক্যু করে যাচ্ছে। এনটিভিসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় গত ৫ অক্টোবর নিউজ হেডিং করা হয়েছে, ‘রাজারবাগ পীরের সব আস্তানা বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের’। অথচ এরকম কোনো নির্দেশই দেয়নি হাইকোর্ট। একইভাবে তারা গত ১০ অক্টোবর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে আইনমন্ত্রীর এক অনুষ্ঠানের বরাত দিয়ে রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে নিউজ করেছে যে, ‘রাজারবাগ পীরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারী আইনমন্ত্রীর’। অথচ এই নিউজের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে আইনমন্ত্রী নিজেই বলেছেন তিনি রাজারবাগ শরীফ নিয়ে এরকম কোনো বক্তব্য দেননি।
মুফতি সিরাজী আরও বলেন, কোথাও নিউজ হচ্ছে ৪৯ মামলা, কোথাও ৮০০ মামলা। কোথাও ৭ হাজার একর, কোথাও নিউজ হচ্ছে ৬ হাজার একর, কোথাও ৩ হাজার একর, আবার কোথাও বা ১ হাজার একর জমি দখল। মূলত এসব ভূয়া তথ্যই প্রমাণ করে যে, এসবই জঙ্গী জামাত বিরোধী শতভাগ সুন্নতী আমলের হক্ব দরবার শরীফ রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে অব্যাহত মিডিয়া ক্যু।
মুফতি সিরাজী বলেন, ৭ হাজার একর জমি দখল, জমি দখলের জন্য মিথ্যা মামলা, মামলাবাজ সিন্ডিকেট এগুলো সবই জামাতী মদদপুষ্ট হলুদ সাংবাদিকতা। জামাত জঙ্গীবাদ বিরোধী এবং একশত ভাগ সুন্নতী আমলের দরবার শরীফ, রাজারবাগ দরবার শরীফ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ালেই এর পেছনে ক্যুর-উদ্দেশ্য রয়েছে।
মুফতি সিরাজী বলেন, গ্রামের বাড়িতে কিছু কৃষি জমি ছাড়া পীর সাহেবের নিজের নামে কোনো সম্পত্তি নেই। পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের সিংহভাগ তিনি মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসার নামে দান করেছেন। এমনকি গ্রামের কৃষি জমিতে উৎপাদিত ফসলও ব্যবহৃত হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য।
কাঞ্চনপুর দরবারের হাফেজ আব্দুল জলীল বলেন, আমি গত ১০ বছর যাবত প্রখ্যাত জঙ্গীবাদ জামাত বিরোধী নূরানী দরবার শরীফ- রাজারবাগ দরবার শরীফ যাতায়াত করছি। এমন হক দরবার শরীফ সম্পর্কে সিআইডির মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কিভাবে মিথ্যা রিপোর্ট দিতে পারলো তা ভাবতেও অবাক লাগে। সিআইডি রিপোর্ট দিয়েছে, রাজারবাগ দরবার শরীফের পেছনে ৩ শতাংশ জমির উপর তিনতলা বাড়ি দখলের জন্য কাঞ্চনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ প্রকৃত সত্য হলো, রাজারবাগ দরবার শরীফের পেছনে ৩ শতক জায়গায় কোনো বাড়িও নেই এবং কোনো ৩ তলা বিল্ডিংও নেই। এরূপ মিথ্যা তথ্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা সিআইডি কি করে হাইকোর্টে প্রেরণ করতে পারলো এটা তদন্তের জন্য আমরা মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
টাঙ্গাইলে পীর জনাব আখতার হোসাইন বুখারী সাহেব বলেন, রাজারবাগ শরীফের পীর সাহেব ক্বিবলা জামাত জঙ্গীবাদ বিরোধীতে অনন্য পীর সাহেব। উনার কাছে আমি যত যাই ততই মুগ্ধ হই। উনি কারো দ্বারা মামলা করিয়েছেন- এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিথ্যা। আর ৪৯ বা ৮০০ মিথ্যা মামলা যদি হয়ে থাকে সেটা খোদ প্রশাসনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে, থানা পুলিশই মামলা নেয়। তারা যাতে মিথ্যা মামলা না নেয় সেজন্য প্রশাসনকেই ঢেলে সাজাতে হবে। কাজেই রাজারবাগের পীর সাহেবের মিথ্যা সমালোচনা না করে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা জামাতীদের চিহিৃত করে প্রত্যাহার করতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সেক্রেটারী মাওলানা আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলেন, রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে ১৯৯০ সালে জামাতকে চ্যালেঞ্জ করে ১ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে বই লেখা হয়েছে। দরবার শরীফ থেকে প্রকাশিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসানে জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ, জামাত হেফাজত সম্পর্কে ১৯৯১ সাল থেকে ক্ষুরধার লেখনী চালানো হচ্ছে। আজকে সে রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে জঙ্গীবাদের মিথ্যা তোহমত দেয়া হচ্ছে।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- চরনপুর দরবারের পীর ছাহেব মাও. আ. সালাম, কাঠালিয়া সুন্নিয়া দরবারের পীর ছাহেব আল্লামা মুফতি আলতাফ হোসাইন জামী, বাংলাদেশ ওলামা লীগের সেক্রেটারী আলহাজ্জ্ব মাও. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি হাফেজ মাও. আ. সাত্তার, গোপালগঞ্জ দরবারের পীর ছাহেব আল্লামা শোয়াইব আহমদ প্রমুখ।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন