বড় শিল্পগ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাংকারসহ গ্রেফতার ১০
নিজস্ব প্রতিবেদক: জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এক কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার গুলশানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাজধানীর ভাটারা এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে গুলশান বিভাগের আভিযানিক টিম।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার শাখায় ওয়াল্টন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা আরটিজিএস ফর্মে ট্রান্সফারের একটি আবেদন আসে। আবেদনকৃত অর্থ এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ট্রান্সফারের আবেদন করা হয়। তবে বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে লেনদেনের আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তিনি ওয়াল্টন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওয়াল্টন গ্রুপ থেকে জানানো হয়, তারা এ ধরনের কোনও অর্থ ট্রান্সফারের আবেদন করেননি। পরে ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে ওয়াল্টন গ্রুপের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ডিএমপির ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রটির ১০ জনকে গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
বড় বড় কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টার্গেট ছিল তাদের:
চক্রের মূলহোতা জাকির হোসেন ডিবিবিএলে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করে। যেসব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বেশি তাদের ব্যাংক হিসেব থেকে স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার পর জাকির ইয়াসিন আলীকে স্বাক্ষর জালিয়াতির কাজ দেয়।
পরে ইয়াসিন আলী স্বাক্ষর জাল করে মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়ার পরিচালিত অ্যাকাউন্ট এনআই করপোরেশন, বিডি লি. নামে এবি ব্যাংক লি. মতিঝিল শাখায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে জাল ব্যাংক দলিল তৈরি করে। পরে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্যদের ঠিক করে।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। দীর্ঘদিন দিন ধরে তারা ডিবিবিএলের সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিল।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এই প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেফতার করতে যায় তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।
তিনি বলেন, চক্রটি দুইভাবে কাজ করে। চক্রটির এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। অন্যদিকে চক্রটির আরেকটি অংশ যে শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা দেবে সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।
চক্রটি এ রকম জালিয়াতি আরও করেছি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি গুলশান বলেন, ওয়ালটন গ্রুপের টাকা তারা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছিল। এছাড়া গ্রেফতারের আগে তারা ইউনাইটেড গ্রুপের থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।
এছাড়া এর আগে তারা এ রকম ট্রান্সফার করেছে কি না তা আমরা জানি না। তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গ্রেফতাররা কেমন অ্যাকাউন্টে টার্গেট করে এমন প্রশ্নে ডিসি আসাদুজ্জামান বলেন, মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্ট টার্গেট করে তারা। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন দ্রুত বুঝতে না পারে। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিশাল অংকের টাকা থাকে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন