ব্যাংকঋণ নির্ভর বাজেট: টাকা ছাপানোর দিকে যাবে সরকার!
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট পূরণে অধিক মাত্রায় ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বাড়ছে। ঘাটতি মেটাতে বাধ্য হয়েই সরকার ব্যাংকের ওপর নিভর্র করছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন টাকা ছাপিয়ে সামাল দেওয়া লাগতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন টাকা ছাপানোর ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদেরও সায় আছে।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপানোর উদ্যোগ নিতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যাংকের ওপর বেশি নির্ভর হয়ে পড়লে সরকারের ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ, ব্যাংকিং খাতের অবস্থা এমনিতেই ভালো না। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত টাকাও নেই। কিন্তু সরকার যদি ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে, তাহলে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাবেন না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও মনে করেন, নতুন বাজেট ব্যাংকঋণনির্ভর করা ঠিক হবে না। এতে বেসরকারি খাত বঞ্চিত হবে।’ ব্যাংক নির্ভরতা কমিয়ে তিনি বিদেশি উৎস থেকে কম সুদে ঋণ আনার পরামর্শ দেন।
তথ্য বলছে, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধেই সরকারের খরচ হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের শুধু মে মাসেই সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ৩১ মে পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
অবশ্য গত প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস ধরে সরকার বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও আর্থিক দুরবস্থার কারণে এখন ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়েই সরকারকে বাড়তি ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকাকে বলা হয় ‘হাই পাওয়ার্ড মানি’ বা ‘উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাকা’- যা বাজারে এসে দ্বিগুণ থেকে আড়াই গুণ টাকার সৃষ্টি করে। যদিও ব্যাংক থেকে নেওয়া বেশিরভাগ টাকাই এখন যাচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে।
এদিকে নাজুক অবস্থায় থাকা দেশের ব্যাংক খাত আরও নাজুক হচ্ছে। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে সরকারি নির্দেশে ঋণের সুদহার কমিয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া, এখন ঋণের কিস্তি না দিলেও খেলাপি না করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অন্যদিকে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকের কমিশনও কমে গেছে। টিকে থাকতে ব্যাংকগুলো খরচ কমানো শুরু করেছে। এরই মধ্যে ভাড়া ও পরিচালন খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই সময়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত উত্তোলনের চাপ রয়েছে, ফলে তারল্য সংকটের আশঙ্কা আছে। এমন পরিস্থিতিতেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যাংকগুলোকেই প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারও রেকর্ড পরিমাণ ঋণ ব্যাংক থেকেই নিতে চাইছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন