বাড়ির ছাদে স্কুলছাত্রের মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা
নরসিংদী সংবাদাদাতা: অনলাইনে ট্রেনিং নিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজিতে বাড়ির ছাদে মাশরুম চাষ শুরু করে দশম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ (১৬)। মাত্র ছয় মাসের মাথায় এখন গড়ে প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করছে সে। মাশরুম চাষে বর্তমানে তার বিনিয়োগ প্রায় দুই লাখ টাকা।
আবদুল্লাহ নরসিংদী সদর উপজেলার বীরপুর এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে। সে নরসিংদী আইডিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার মাশরুম বাগানের নাম ফিউচার মাশরুম সেন্টার।
সরেজমিনে আবদুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন তলা বাড়ির ছাদের এক পাশে টিনের শেড। শেডের নিচে পাটের রশির শিকা। শিকায় ঝুলছে মাশরুমের বীজপত্র। খড় দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো এই বীজপত্রের চারপাশ দিয়ে ছোট বড় মাশরুম উঁকি দিচ্ছে।
জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে স্কুল বন্ধ থাকার সময় বাসায় বেকার বসে না থেকে নতুন কিছু শেখার এবং নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে আবদুল্লাহ অনলাইনে মাশরুম সম্পর্কে ঘাঁটাঘাঁটি করে। একপর্যায়ে সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইসস্টিটিউট থেকে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে একটি অনলাইন কোর্স করে। সেখান থেকে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে জুন মাসের দিকে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে বাড়ির ছাদে মাশরুম চাষ শুরু করে। প্রথমে কোনো রকমে পুঁজি উঠলেও গত দুই মাস ধরে গড়ে ৩০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার।
মাশরুম চাষি আবদুল্লাহ বলে, আমি বাবার কাছ থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। গত ছয় মাস কাজ করেছি। তিন মাস লাগে একটা বীজপত্র বা মাইসিলিয়াম শেষ হতে। প্রতিটি মাইসিলিয়াম থেকে দেড় কেজি মাশরুম আসে। প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়। এখন আমার পুঁজি আছে দুই লাখ টাকা। প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়। সব খরচা বাদ দিয়ে প্রতিমাসে গড়ে আমার ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। আমার এখানে শুধুমাত্র ‘ওয়েস্ট্রা পি ও ২’ জাতের মাশরুম আছে।
মাশরুম বিক্রি ও বাজারজাতকরণে কোনো ধরনের সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে আবদুল্লাহ বলে, এখন পর্যন্ত মাশরুমটা সমাজের সব স্তরে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কেউ কেউ ব্যাঙের ছাতা বলে থাকেন। আমরা এটিকে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করি। অনলাইনে অর্ডার নিই, কুরিয়ার করি। আবার অনেকে এসে বাড়ি থেকেই নিয়ে যায়। বেশিরভাগ মাশরুম যায় রেস্টুরেন্টগুলোতে। নরসিংদীতে মাশরুম বাজারজাতকরণ ও মাশরুম চাষিদের প্রশিক্ষণের কোনো সেন্টার দেখিনি আমি।
আবদুল্লাহর বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলের এ রকম কাজে আমি খুব খুশি। অবসরে বসে না থেকে উৎপাদনমুখী কাজ করছে, এটাই অনেক।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মাহবুবুর রশীদ বলেন, মাশরুম চাষে এখন পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয়নি। তবে সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে যে কেউ। এছাড়াও আঞ্চলিকভাবে নরসিংদীতে যারা মাশরুম চাষ করে সহজভাবে বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে আমরা তাদেরকে বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেই।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন