বহু মানুষকেই এখন দাঁড়াতে হচ্ছে টিসিবি’র লাইনে
নিজস্ব প্রতিবেদক: নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি যখন জীবনকে নানাভাবে বিব্রত করছে। তাই নিম্নআয়ের মানুষ নিরুপায় হয়ে দাঁড়াচ্ছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) -এর লাইনে। রোদে পুড়ে ঘন্টার ঘন্টা দাঁড়িয়ে কিনছেন কয়েকটি নিত্যপণ্য। কয়েকটি নিত্যপণ্য স্বাভাবিক মূল্যে বিক্রি করছে তারা সাধারণ মানুষের কাছে।
রাজধানীর মিরপুরে বাস করেন দিনমজুর লোকমান হোসেন। মাঝে মাঝে রিকশাও চালান। লকডাউনে কাজ নাই, তাই রিকশা নিয়ে নেমেছেন রাস্তায়। গুলিস্তান এলাকায় দেখা হলে বললেন- ‘লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির তেল নিলাম। বাজার থেকে লিটারে ৫০ টাকা কম। ৫ লিটারে ২৫০ টাকা বাঁচল।’ একইভাবে ৫৫ টাকা কেজি দরে মসুর ডাল নিয়েছেন তিনি। এখানেও সাশ্রয় হয়েছে কেজিতে ৩০ টাকার বেশি।
সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের সামনে টিসিবির ট্রাক থেকে তেল ও চিনি কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সচিবালয়ের এক কর্মচারী। তিনি বললেন, ‘টিসিবি আছে বলেই আমাদের মতো গরীব মানুষরা বেঁচে আছি। এখন তেল, চিনি নিচ্ছি। যা বাজার থেকে কিনলে অনেক বেশি টাকা লাগতো। রোজার সময় ছোলা, পেঁয়াজ, তেল, চিনি ও ডাল সবই কিনেছি। কম দামে পাই বলেই তো কিনি। এভাবে আমাদের যে টাকা বাঁচে তা দিয়ে ছেলেমেয়ের অন্য চাহিদা মেটাই।’
এভাবে, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টিসিবির ডিলারদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে চিনি, মসুর ডাল ও বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করা হচ্ছে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, গত ৫ জুলাই থেকে ট্রাক সেল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটা চলবে ২৯ জুলাই (ঈদুল আজহার ছুটি ছাড়া) পর্যন্ত। পরবর্তীকালে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে ৪০০ ট্রাকের মাধ্যমে তেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করেছে তারা। গত ১ এপ্রিল থেকে টিসিবির খোলা ট্রাকের সংখ্যা ১০০ বাড়ানো হয়েছে। তখন থেকেমোট ৫০০ খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম ১৭ জুন পর্যন্ত চলেছে। গত সোমবার (৫ জুলাই) থেকে সারাদেশে আবার ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি। চলমান পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ কার্যক্রম চলবে ২৯ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে ৫০০ লিটার তেল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা লিটার দরে ২ থেকে ৫ লিটার সয়াবিন কিনতে পারছেন।
টিসিবি’র যাত্রা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়ে ১৯৭২ সালে। নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আপৎকালীন মজুদ গড়ে তুলে প্রয়োজনের সময়ে ভোক্তা সাধারণের নিকট সরবরাহ করার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখার মিশন নিয়েই শুরু করেছিল টিসিবি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীন উত্তরকালে বিপর্যস্ত অর্থনীতি, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবিন্যস্থ বন্দর ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে পর্যাপ্ত নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল জরুরি ভিত্তিতে যোগান দেওয়া এবং ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রেক্ষিতেই ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিষ্ঠিত হয়।
আশির দশকে মুক্তবাজার অর্থনীতি বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সীমিত হয়ে আসে। পরবর্তীকালে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সরকারি উদ্যোগের অপরিহার্যতা বিবচনা করে বর্তমান সরকার টিসিবিকে গতিশীল ও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সেই থেকে আবার শুরু।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে টিসিবি’র গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জনগণের স্বার্থেই টিসিবি’র ন্যায় একটি রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক সংস্থা কার্যকর থাকা জরুরি। সে গুরুত্ব অনুধাবন করেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই টিসিবিকে সক্রিয় ও শক্তিশালী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর জনবল ও মুলধন বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার টিসিবির জনবল ও মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া টিসিবিকে তো ধংস করে দেওয়া হয়েছিল। টিসিবির কোনও অস্তিত্বই প্রায় ছিলো না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে টিসিবিকে বাঁচানোর কর্মসূচি নিয়েছে। সেই মৃতপ্রায় টিসিবি আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের আশির্বাদ নিয়ে সামনে এগিয়ে চলেছে।
মন্ত্রী বলেন, দেশের বাজারে যখন যে নিত্যপণ্যটির সংকট বা উচ্চ মূল্য কিংবা মজুদে সমস্যা দেখা দেয়, তখনই টিসিবি সেই পণ্যটি নিয়ে হাজির হয়। সম্প্রতি বছরগুলোয় পেঁয়াজ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিলো সেটি কাটিয়ে তুলেছে টিসিবি। মিসর, মিয়ানমার, পাকিস্তান, এমনকি তুরস্ক থেকে আমদানি করে তা সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন