দুদকের বরখাস্ত পরিচালক বাছিরের ৮ ও সাবেক ডিআইজি মিজানের ৩ বছরের দন্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক: মিজানুর রহমান ও খন্দকার এনামুল বাছির ছিলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের মতো অবস্থানে থেকে এভাবে ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় জড়িয়ে পুরো জাতি হতবাক হয়েছে। তারা সমস্ত সরকারি কর্মকর্তার সম্মান নষ্ট করেছে।
৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৮ বছর কারাদ- ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদ- দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। এছাড়া পুলিশের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান তিন বছরের কারাদ- দেওয়া হয়।
রায় উপলক্ষে ডিআইজি মিজান ও খন্দকার এনামুল বাছিরকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা শুরু হয়। ইংরেজিতে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে দ-বিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দ-বিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদ- ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদ- দেওয়া হয়। বাছিরের দুটি দ- একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দ- ভোগ করতে হবে।
তবে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় উভয়ে দোষী সাব্যস্ত হলেও একই ধরনের অভিযোগে দ-িত হওয়ায় এই ধারায় কাউকেই সাজা দেওয়া হয়নি।
রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় রায় শোনেন দুজন। এ সময় বাছিরকে চিন্তিত দেখা গেলেও মিজান ছিলেন হাস্যোজ্বল ও নিরুদ্বেগ। রায় ঘোষণা শেষে ডিআইজি মিজান বলেন, দুদকে বাছির একজন না, আরও বাছির আছে। তাদের খুঁজে বের করুন।
দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল ও আসামিপক্ষে এহসানুল হক সমাজী রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলো।
রায়ের বিষয়ে দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ডিআইজি মিজানুর রহমানের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পায় খন্দকার এনামুল বাছির। সেই অভিযোগ থেকে তাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে রমনা পার্কে ৪০ লাখ টাকা বাছিরকে দেয় মিজান। তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। আমরা দুদকের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় আদালত এই দ- দেয়।
রায়ে দুজন দ-িত হওয়ায় সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। রায় ঘোষণা শেষে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এরপর গত ১২ জানুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থনে ডিআইজি মিজান ৬ পৃষ্ঠা এবং এনামুল বাছির ১২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেয়।
সবশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে।
৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ দুদকের পরিচালক শেখ ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছিলো। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের একই কর্মকর্তা।
গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেয়। গত বছর ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলো ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলো মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন