ঢাকায় যানজটে দিনে নষ্ট ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা -বছরে ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক: এখনো খুলেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ অনেকটাই বাকি। তারপরেও রাজধানীতে তীব্র যানজট। দুপুরের আগে-পরে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চললেও, সকাল-বিকেল অফিস শুরু ও ছুটির সময়ে বাড়ে ভোগান্তি। যানজটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
ঢাকায় যানজটের কারণে পিক আওয়ারে গণপরিবহনগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যেখানে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।
ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের দুর্ভোগের নাম যানজট। এই যানজটের কারণে অতিষ্ঠ শুধু সাধারণ মানুষের জীবন নয়, প্রতিনিয়ত শূন্য হচ্ছে রাষ্ট্রের পকেটও। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। পাশাপাশি যানজটে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় তৈরি হয় মানসিক অবসাদ। গবেষণা বলছে, যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দিনে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যেভাবে যানজট পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও আরও বাড়বে।
নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা:
যানজট নিয়ে সর্বশেষ গবেষণা বলছে, ঢাকায় যানজটের কারণে পিক আওয়ারে গণপরিবহনগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যেখানে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।
এআরআই’র গবেষণায় বলা হয়, ২০১৫ সালের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, ঢাকায় দৈনিক প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ট্রিপ হয়। উল্লেখ্য, একজন মানুষ কোনও একটি বাহনে উঠে নির্ধারিত গন্তব্যে নামলে একটি যাত্রা বা ট্রিপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা গড়ে ছিল ২১.২ কিলোমিটার। ২০০৯ সালে তা ঘণ্টায় ৬.৮ কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোনও উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম।
বছরে গড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি:
২০১১ সালে রাজধানীতে যানজটের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) জানায়, ক্ষতির পরিমাণ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালে যানজটের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করে ইউএনডিপি। তাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ হাজার কোটি টাকার মতো। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই) জানায়, রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার, যা মোট জিডিপির ৭ শতাংশের সমান।
২০১৬ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬: ঢাকা মহানগরে যানজট, শাসন ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, যানজটের আর্থিক ক্ষতির পরিমাপে ২৬.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের এয়ারপোর্ট-পোস্তগোলা রুটকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়।
দেখা গেছে, ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ার) এ রুটে গাড়ির গতিসীমা থাকে ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার। এই ধীরগতির কারণে প্রতিবার যাতায়াতে একজন যাত্রীর যে সময় নষ্ট হয়, যার আর্থিক পরিমাণ দিনে আনুমানিক ৫৩ টাকা। এ ছাড়া যানজটে নষ্ট হওয়া সময়ের আর্থিক মূল্য ও জ্বালানি খরচ সার্বিকভাবে মাসে ২২৭ কোটি টাকা দাঁড়ায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট: আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যানজটের কারণে ২০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে। এ থেকে বলা যায়, যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে গড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
তবে রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণ করলে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করলে এই ক্ষতি অন্তত ৬০ শতাংশ বা ২২ হাজার কোটি টাকা কমানো যেত।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন