কক্সবাজারের শুঁটকি এখন পর্যটন পণ্য
কক্সবাজার সংবাদদাতা: রাসায়নিক কিংবা কেমিক্যাল মিশ্রিত না হওয়ায় দিন দিন কক্সবাজারের শুঁটকির চাহিদা বাড়ছে। পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে এলে ফিরে যাওয়ার সময় অন্তত এক প্যাকেট শুঁটকি হাতে নিয়ে ফিরছেন। পর্যটকরা শহরের শুঁটকির দোকানগুলো ছাড়াও ভিড় করছেন শহরের বিখ্যাত নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লীতে।
সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একটি সভায় শুঁটকিকে ‘পর্যটন পণ্য’ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এটি এখন পর্যটন পণ্য হয়ে উঠছে।
কক্সবাজার শহরের ১০ কিলোমিটার দূরে নাজিরারটেক এলাকায় গড়ে উঠেছে সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক শুঁটকিপল্লী। এই পল্লীতে এখন পর্যটকদের বিচরণ বেড়েছে। ভ্রমণ শেষে এখন শুঁটকি কিনতে ওই পল্লীতে কিছু সময়ের জন্য ঘুরে আসেন। কেউ শুঁটকি কিনছেন আবার অনেকে ছবি তুলে চলে আসছেন।
কক্সবাজারে ৪০ হাজার মে.টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা:
নারায়ণগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা সাইদুল হাসান বলেন, ‘কক্সবাজারে এলেই শুঁটকি নিয়ে যেতে হয়। আমাদের নিজেদের জন্য নয়, স্বজনদের জন্যও নিতে হয়। তাই ২০ কেজি বিভিন্ন মাছের শুঁটকি নিয়েছি। এগুলো সবাইকে দেবো।’
ময়মনসিংহ থেকে আসা পর্যটক মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘সামুদ্রিক শুঁটকি অত্যন্ত সুস্বাদু। বিশেষ করে কক্সবাজারের শুঁটকির ঘ্রাণ আলাদা। তাই নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লীতে শুঁটকি কিনতে এসেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাবার তালিকায় শুঁটকিকে সুস্বাদু হিসেবে রাখা হয়। শুঁটকির আচার ও পথ্য হিসেবে ব্যবহারে দিনদিন সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তারা দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছেন অর্গানিক শুঁটকির প্রতি। লবণ-বিষ ও কেমিক্যালমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুস্বাদু এই শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ভোক্তাদের চাহিদামতো প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয় শুঁটকি। উৎপাদনের কোনও পর্যায়েই লবণ-বিষ-ফরমালিন অথবা অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। তাই মাছের প্রাকৃতিক স্বাদ ও মান বজায় থাকে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মী দিয়ে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদিত হচ্ছে সামুদ্রিক লইট্টা, ছুরি, সুরমা, রূপচাঁদা, কালিচাঁদা, পলি, চিংড়ি ও ফাইসা মাছের শুঁটকি।
শুঁটকি বিক্রি করে কোটিপতি কক্সবাজারের আমান:
নাজিরারটেক ছাড়াও জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে ৫০টির অধিক শুঁটকি মহল রয়েছে। এতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রমিকরা বড় বড় মাছগুলো পানিতে ধুয়ে নেন। কেউ কেউ কেটে রোদে শুকাচ্ছেন। এরপর বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঘেরগুলোতে সাজানো হয় নানা রকম মাছ। এখানে ছুরি, লইট্যা, পোয়া, ফাইসা, লাক্কা, মাইট্যা ও রূপচাঁদা মাছসহ বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়।
জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় পুরোদমে চলছে শুঁটকি উৎপাদন। বিশেষ করে কক্সবাজারের উপকূলীয় মহেশখালীর সোনাদিয়া, গোরকঘাটা, তাজিয়াকাটা, কুতুবজোম, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ, খুদিয়ারটেক, আলী আকবর ডেইল, আমজাখালী, পশ্চিম ধুরুং, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, জালিয়াপাড়া, সদর উপজেলার খুরুশকুলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ শুঁটকি তৈরি করা হয়।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন