অস্তিত্ব সংকটে ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘরভাড়া দিতে পারছেন না। আত্মীয়-পরিচিতদের সাহায্য আর ধার-দেনা করে সংসার চলেছে ছুটির দিনগুলোতে। এখন আর তাও সম্ভব হচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতি রাজধানীর হাজার হাজার ব্যবসায়ীর।
জানা গেছে, লকডাউনে নীলক্ষেত বন্ধ হওয়ার কারণে নীলক্ষেতের প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়ী মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আত্মীয়, শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে ধার ও সাহায্য নিয়ে প্রতিদিনের বাজার খরচ চলছে তাদের। অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। ব্যবসায়ীরা জানান প্রায় দেড়শ ব্যবসায়ী সংসার চালাতে পারছেন না। পাবলিকেশন্স মালিকরাও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।
গত ১৭ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। দোকানপাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। নীলক্ষেতের প্রায় চারশত বইয়ের দোকান ছাড়াও ফুটপাথের বই ব্যবসায়ীদের সবকিছু বন্ধ করে ঘরে ফিরতে হয়। কেউ কেউ বইয়ের দোকান গোপনে খেলা রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
ব্যবসায়ীরা জানান, চারশ ব্যবসায়ীর মধ্যে প্রায় দেড়শ ব্যবসায়ীর সংসার চলে প্রতিদিনের আয় দিয়ে। লভ্যাংশের কোনও অর্থই জমা থাকে না। বছরের প্রথম চার থেকে পাঁচ মাসের আয় দিয়েই চলতে হয় সারা বছর। এই পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের খবর জানতে চাইলে বিসমিল্লাহ বুক হাউসের মালিক এ কে এম ফকরুল ইসলাম কাজল জানান, দুই ছেলে, দুই মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার তার। বড় মেয়ে বদরুন্নেসা কলেজে গডুতের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট সন্তান ছাড়া অন্যরা স্কুল ও কলেজে পড়ে। তার এই গোছানো সংসারটি চলে বই ব্যবসার আয়ে। কাজল বলেন, আত্মীয়, পরিচিত ও শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে আর ধার করে ছেলেমেয়েদের খাবার জোগাড় করছি। তিন মাসের বাড়ি ভাড়া দিতে পারিনি। ব্যবসার মৌসুম শেষ। তাছাড়া দোকান খুললেও লকডাউনের কারণে আর কেউ বই কিনতে আসবে না। তিন মাসে দোকানের ভাড়া ৬০ হাজার টাকা দেওয়াও সম্ভব নয়। দোকানের জন্য দেওয়া সিকিউরিটি দেড় লাখ টাকা থেকে যদি ভাড়া কেটে নেওয়া হয় তাহলে শেষ সম্বলটুকুও হারাতে হবে।
স্কুল কলেজ লাইব্রেরির মালিক জিয়াউর রহমান জানান, নীলক্ষেতের চারশ বই ব্যবসায়ীর মধ্যে একশ জনের আর্থিক অবস্থা ভালো। বাকি একশ জনের অবস্থা মাঝারি। এছাড়া ২৫০ জন ব্যবসায়ীর সংসার কষ্টে চলে চলে। এই দুইশ ৫০ জনের মধ্যে প্রায় দেড়শ জনের খুবই টানাটানির সংসার। সারাবছর ধার-দেনা করে সংসার চলে আর একশ ব্যবসায়ীর। এছাড়া ৫০ জনের মতো ফুটপাথে ব্যবসা করে তাদের জীবন দিনমজুরের মতো।
জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের তিন মাসের বেশি সময় বসে থাকতে হলো। এখন খুলে দিলেও আর ব্যবসা হবে না। ক্রেতা থাকবে না। পুরো বছরটি ধার-দেনা করে চলতে হবে। ব্যবসাহীন অবস্থায় ঢাকায় টিকে থাকতে পারবো না তাই বি-বাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি। আমার মতো অনেকেই গ্রামে চলে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে কোনও ধরনের সাহায্য-সহযোগিতাও নেই। আর সে কারণে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর টিকে থাকা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। লকডাউনের সময় মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে যারা সংসার চালিয়েছে, তাদের সামনে আরও বড় সমস্যা অপেক্ষ করছে। ৩১ মে থেকে বইয়ের দোকান খুললেই দোকান মালিক ও বাড়িওয়ালারা বকেয়া তিন মাসের ভাড়া চাইবে। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতা পাওয়া যাবে না। অনেক ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতিতে দোকান ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। যাদের ব্যাংক লোন আছে তাদের দোকান ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া পথ নেই।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন