অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অভ্যন্তরঢু চাহিদা বাড়ানোর পরামর্শ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে অভ্যন্তরঢু চাহিদা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে জোর দিতে হবে। রোববার ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব কথা জানায় অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টরা।
আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যাংক-ঋণ ভিত্তিক যেসব প্যাকেজ নেয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাত সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে। তার ওপর সরকার ব্যাংক ঋণ ভিত্তিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এতে করে অর্থনীতির উন্নতি হবে। তবে প্রণোদনা বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মাধ্যমে ব্যাংক খাতে তারল্য বাড়বে। এই উদ্যোগটি স্বল্পমেয়াদি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রয়োজনে ৫, ১০ অথবা ১৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি এতটা কমে যাওয়া আসলেই দুঃখজনক। তবে লকডাউন পরবর্তীতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য বেসরকারি ঋণ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে। পাশাপাশি দেশীয় দক্ষশক্তি বাড়াতে হবে। কারণ দক্ষজনশক্তি না থাকায় দেশ থেকে প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন অর্থ চলে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে।
আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, এখন সময় দেশীয় ইন্ডাস্ট্রিকে সার্পোট দেয়ার। পণ্য উৎপাদন করে অভ্যন্তরঢু চাহিদা বাড়ানোর, বিদেশেও রফতানি করা যাবে। বাংলাদেশটাকে পুরা ইপিজেডের মতো করে দেবেন। দেশটাই পাল্টে যাবে। চলমান পরিস্থিতিতে যেসব পণ্য রফতানি করতে সমস্যা হচ্ছে তা দেশের বাজারে সরবারহের পরামর্শ দেন তিনি।
সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দেশের কৃষকরা চলমান সংকটকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। তাই কৃষি খাতের ঋণ প্যাকেজের সুদহার আরও কমিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামোর তৈরি এবং দক্ষশক্তি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডির) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
মাশরুর রিয়াজ বলেন, লকডাউন পরবর্তী সময়ে প্রথমে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এই অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রণোদনা দিতে হবে। আগামী বাজেটে ৭-৮% ঘাটতি থাকতে পারে। তবে বাজেটে নতুন করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি এবং বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কারণ ইতোমধ্যেই ১৪ লাখ কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে। তাদের পাশাপাশি দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সক্রিয় পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। সরকার যেই স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার পাশাপাশি ট্যাক্স হার কমিয়ে আনার প্রয়োজন আছে। গত ২৫ বছরে আমরা লক্ষ্য করেছি ট্যাক্স রেট কমালে রেভিনিউ কখনই কমে না। আগামী দুই বছরে অবশ্যই এই সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ভ্যাট কমানোরও প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। যা আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়াতে সাহায্য করবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন