অনলাইনে ‘মুশকিল আসান কেন্দ্র’ খুলে ৩ বছরে হাতিয়েছে কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বল্পশিক্ষিত সারোয়ার হোসেন। নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘চিকিৎসক ও মাওলানা’ হিসেবে। বেশভূষায়ও অবিশ্বাসের সুযোগ নেই। অনলআইনে চালাতো প্রচারণা। সব ধরনের ‘মুশকিল আসান’-এর কথা বলে গেল তিন বছরে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সম্প্রতি দুই সহযোগীসহ এই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দক্ষিণখান থানাধীন ফায়দাবাদ কোটবাড়ি বাজার এলাকার একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র্যাব বলছে, এ চক্রের অন্যতম মূলহোতা সারোয়ার হোসেন (২৭)। তার সহযোগী দুই জন হলো মোহাম্মদ লাজু পারভেজ (২৭) ও আব্দুর রহমান (২৪)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি পাসপোর্ট, একটি চেক বই, সাতটি এটিএম কার্ড, একটি জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি প্রেস আইডি কার্ড, একটি ল্যাপটপ, দুটি কলার মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, তিনটি ক্যামেরা স্ট্যান্ড, সিসিটিভি ক্যামেরা, সাউন্ড সিস্টেম ও নগদ লক্ষাধিক টাকা।
র্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃত সারোয়ার হোসেন তার দুই সহযোগীসহ দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণার ফাঁদ তৈরির প্রথম ধাপ হিসেবে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল খোলে এই চক্রটি। পরবর্তী সময়ে ‘জিন তাড়ানো’, জাদুটোনা’, ব্ল্যাকমেইল’, বদনজর’, কুফুরি কালাম’ ও ‘বান’ ইত্যাদির প্রভাবে মানুষের যে ক্ষতি হয় তার সমাধান করতে পারে বলে নিয়মিত প্রচার করতে থাকে। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে আরোগ্য লাভের আশায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হতদরিদ্র মানুষ এছাড়া শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ নারী ও পুরুষ তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসতো। পরবর্তী সময়ে কবিরাজি চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছে এই চক্রটি।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সারোয়ার র্যাবকে আরও জানায়, সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পেশাগত জীবনে গাজীপুর এলাকায় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিল। সে কোনোদিন কোনও মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেনি। এমনকি চিকিৎসাবিদ্যার ন্যূনতম প্রশিক্ষণও নেই। তারপরও সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে গাজীপুরের কাশিমপুরে আস্ত লতিফপুর এলাকায় অসহায় নিরীহ মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণার সম্পর্কে জানার আগেই অবস্থান পরিবর্তন করে দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকায় এসে পুনরায় একইভাবে মানুষকে প্রতারিত করতে থাকে।
র্যাব-১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, সম্প্রতি একটি চক্র ‘কাগজ হয়ে যাবে টাকা’ ও ‘অসুস্থ হলে সুস্থ করে দেবে জিন’- এমন তথ্য প্রচার করে সাধারণ মানুষদের নানা কৌশলে প্রতারিত করে আসছিল। এছাড়া স্বল্পসময়ে স্বাবলম্বী করার প্রলোভন দেখিয়ে এবং রোগমুক্তির বিভিন্ন বিষয় অনলাইন মাধ্যমে প্রচারণার ফলে সাধারণ মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রলোভনে পড়ে তাদের শরণাপন্ন হতো। একপর্যায়ে মানুষদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা দাবি করতো। প্রলোভনে পড়ে অনেকেই তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে কিংবা সরাসরি দেখা করে টাকা দিয়ে যেতো। ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে না পড়তে মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, শুধু প্রলোভনের কারণে অনেকেই হাজার হাজার, লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন। কেউ কারও ভাগ্য ঠিক করে দিতে পারে না, এগুলো সবই প্রতারণা।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন