পানি কমার সঙ্গে বাড়ছে ভাঙ্গন
নিউজ ডেস্ক: প্রধান নদ-নদীর পানি কমলে কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তবে একই সঙ্গে দেশের অনেক এলাকায় বাড়ছে ভাঙ্গন।
প্লাবিত এলাকার মধ্যে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সোমবার সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি গতকাল মঙ্গলবার সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরে সমুদ্রবন্দরে বহাল রাখা হয়েছে ৩ নম্বর সতর্কতা।
সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী এ বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে সময় লাগবে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
চলমান বন্যায় কয়েক লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে অনেক বসতভিটা। ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন জানিয়েছে, শরীয়তপুরে ভাঙ্গনের তীব্রতায় জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাজিরা, পালেরচর, কুন্ডেরচর, পূর্ব নাওডোবা, বড়কান্দি ইউনিয়নে ১৯২টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে।
পানি কমার সঙ্গে ভাঙ্গনের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলমান বন্যায় কুড়িগ্রামে ১০০ পরিবার, বগুড়ায় ১৬ হাজার ৮০০, জামালপুরে ২২ হাজার ৯৩৪ ও টাঙ্গাইলে ২১২ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জামালপুরে ৭৪১০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে, প্রায় ১৮ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান জানান, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমা আগামী ৪৮ ঘন্টা অব্যাহত থাকবে।
নদ-নদীর ১০৯টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ৭৬টি পয়েন্টে পানি কমেছে। তবে ১৬টি পয়েন্টে এখনও পানি বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে।
আগামী ১০ দিনের পূর্বাভাসের বিষয়ে কেন্দ্রের এ নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বহ্মপুত্র-যমুনায় পানি কমতে থাকায় জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মায়ও পানি কমতে থাকায় রাজবাড়ি, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৭ দিনে উন্নতি হবে।
চলতি মৌসুমে অগাস্টের শেষ দিকে উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টির হয়। চলতি সপ্তাহে তা ১৫টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বিস্তার ঘটে। শনিবার থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
সুস্পষ্ট লঘুচাপ, ৩ নম্বর সতর্কতা বহাল:
এদিকে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ ও তৎসংলগ্ন উড়িষ্যা এলাকায় অবস্থান করছে।
এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আগামী ২ দিন বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ারও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকার অনেক জায়গায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হতে পারে।
গত ২৪ ঘন্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ২৪ মিলিমিটার।
এ সপ্তাহে কয়েকদিন ভ্যাপসা গরমে আবহাওয়ার মধ্যে সোমবার বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপটি সৃষ্ট হলে সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন