লকডাউনের ক্ষতি: ভরা মৌসুমেও বড় লোকসানে পেয়ারা চাষিরা
বরিশাল সংবাদাদাতা: এ বিভাগের তিন জেলার ৫৫ গ্রামে পেয়ারার ফলন প্রতি বছরই ভালো হয়। বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর জেলার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার অবলম্বন।
এ সময়ে এসব এলাকার নদী-খালপাড়ে পেয়ারার সমারোহ থাকলেও বৈরি সরকারী বিধিনিষেধের খপ্পরে পড়ে ভালো নেই পেয়ারা চাষিরা। ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলীর ভাসমান হাট থেকে বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারা সরবরাহ হয় সারা দেশে।
প্রতি বছর মৌসুমজুড়ে প্রতিদিন নৌকা, ট্রলার ও ট্রাকে করে পেয়ারা যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাষি, বাগান মালিক, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কোলাহলে মুখর থাকত ভীমরুলী ভাসমান হাটসহ প্রতিটি পেয়ারা বাগান। কিন্ত এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সরকারী বিধিনিষেধের কারণে পাইকারদের আনাগোনা অর্ধেকেরও কম।
ফলে পেয়ারাকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। লোকসানে চরম বিপর্যয়ের মুখে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন কয়েক হাজার কৃষক। পেয়ারার রাজ্য খ্যাত ভিমরুলী, শতদশকাঠী, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠী, জগদীশপুর এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কাপুড়কাঠি গ্রামের প্রবীণ পেয়ারা চাষি মোক্তার হোসেন জানান, ভীমরুলীকে পেয়ারার রাজ্য বলা হলেও পার্শ্ববর্তী বরিশালের বানারীপাড়া, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৫৫গ্রাম জুড়ে পেয়ারা চাষের বিস্তৃতি রয়েছে। এ তিন উপজেলার ৫৫ গ্রামে যুগ যুগ ধরে চাষ হচ্ছে বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারা।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের অন্যত্র পেয়ারা হলেও বরিশাল জেলার বানারীপাড়া, ঝালকাঠি জেলার ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠি জেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় ১৩ গ্রামের ৩৫০ হেক্টর জমিতে, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়।
মোকামের মৌসুমে প্রতিদিন ৫-৭ হাজার মন পেয়ারা কেনাবেচা হতো। কিন্তু সরকারী বিধিনিষেধে এবার চাষিদের মনে আনন্দ নেই। কারণ এসব এলাকার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস্য হচ্ছে পেয়ারা।
এ বিষয়ে কির্ত্তিপাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, সরকারী লকডাউনের কারণে চাষিরাও বাগানের যতœ নিতে পারেননি। এছাড়াও পাইকারদের পরিবহন সমস্যা হওয়ায় তাদের আনাগোনাও অনেক কম। তাই এবার পেয়ারা চাষিদের মুখে হাসি নেই। চাষিরা এখন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ফজলুল হক জানান, লকডাউনে চাষিরা যথাযথভাবে পরিচর্যা করতে না পারায় ছিটপড়া রোগের বিস্তার ঘটেছে। এ কারণে ফলন এ বছর কম হয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন