সরকারী বিধিনিষেধের ক্ষতি: কমদামী নিম্নমানের চালের ক্রেতা বেড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারী বিধিনিষেধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নআয়ের গরিব মানুষ। অথচ এই গরিবের মোটা চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে এক কেজি চাল কিনতে লাগে ৫০ টাকা। কোথাও কোথাও ৪৮ বা ৪৬ টাকাতেও মোটা চাল পাওয়া, তবে সেগুলো খুবই নিম্নমানের। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় বলছেন, মোটা চালের দাম এখন যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। তারা আরও বলছেন, সরকারী লকডাউনে কাজ হারানো মানুষেরা নতুন করে গরিব হওয়ার কারণে তারা মাঝারি চাল ছেড়ে মোটা ও নিম্নমানের চালের দিকে ঝুঁকছেন। এটাও দাম বাড়ার কারণ।
যদিও দেশে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। সরকারি গুদামে মজুত বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দাম কমতির দিকে। কিন্তু দেশে বাজারের চিত্র তার উল্টো।
রাজধানীর শ্যামবাজার ও কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিকন বা মাঝারি ধরনের চালের উৎপাদন বাড়লেও মোটা চালের উৎপাদন সেই তুলনায় বাড়েনি। কিন্তু এই চালের চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। এছাড়া কাজ হারানো একটি শ্রেণী নতুন করে গরিব হওয়ার কারণে তারা মাঝারি বা চিকন চাল ছেড়ে মোটা চালের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে মাঝারি ও চিকন চালের চেয়ে মোটা চালের দাম তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে বেশি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সারা দেশে সরকারী বিধিনিষেধে অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষের আয় কমেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, গত এক বছরে গরিবের মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশের মতো। সেখানে একই সময়ে চিকন ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশের মতো।
সরকারের এই সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত এক মাসে গরিবের মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪.৩৫ শতাংশ। অথচ একই সময়ে চিকন ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশেরও কম। তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই চালের দাম আগের সপ্তাহের একই সময়ের তুলনায় ২.৯১ শতাংশ বেশি।
প্রসঙ্গত, সাধারণত, বোরো মৌসুম শেষে প্রতিবছর চালের দাম অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু এবার উল্টো দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, চালের দাম সামনে আরও বাড়বে। রাজধানীর কাওরান বাজারের খুচরা তানভীর আহমেদ বলেন, মোটা চালের দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। অর্থাৎ মোটা চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই টাকার মতো বেড়েছে। শুক্রবার বিআর-২৮ চাল ৫৩-৫৪ টাকা এবং মোটা গুটি স্বর্ণা চাল মানভেদে ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ধানের দাম বেশি, এ কারণে চালের দাম বেশি।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাংলাদেশেই এখন চালের দাম সর্বোচ্চ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এএফও) সর্বশেষ প্রতিবেদন এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সব দেশে চালের দাম কমেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড জায়েদ বখত বলেন, চালের দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। তবে ধানের দাম বাড়তি, তার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। এছাড়া সারা দেশে বিধিনিষেধে অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষের আয় কমেছে। তারা হয়তো বাধ্য হয়ে মোটা চাল কিনতে শুরু করেছেন। এর ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মোটা চালের দাম বেড়ে গেছে।’
রাজশাহী অঞ্চলের ধান-চালের চাতাল ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষক আগের মতো মোটা চাল উৎপাদন করে না। এখন অধিকাংশ কৃষক ইরি ২৯ চাল উৎপাদন করে। আর ইরি-১৪ ও ইরি-২৮ চাল মেশিনে ছেটে মিনিকেট ও নাজির শাইল হচ্ছে। ফলে বাজারে মোটা চালের সংকট আছে।’
এদিকে বাজারে শুধু মোটা চাল নয়, মাঝারি ও সরু চালের দামও কমেনি। ঢাকার খুচরা দোকানে মাঝারি বিআর-২৮ ও সমজাতীয় চাল মানভেদে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশের মতো বেশি। আর সরু মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন