রূপগঞ্জে কারখানায় ভয়াবহ আগুন
-৬০ পোড়া লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ শতাধিক
-তালাবদ্ধ থাকায় বেরুতে পারেনি শ্রমিকরা
-এত পুড়েছে, চেনা যাচ্ছে না বেশিরভাগ লাশ
নারায়ণগঞ্জ সংবাদাদাতা: রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ জনের পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ আছেন শতাধিক শ্রমিক। তারাও মারা গেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে ৬ তলা ভবনের ৪ তলা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এ লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অগ্নিকা-ের সময় ওই ৬তলা ভবনের ৪ তলার শ্রমিকরা কেউ বের হতে পারেননি। প্রতিদিন ৪ তলায় ৭০-৮০ জন শ্রমিক কাজ করতেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে।
তালাবদ্ধ থাকায় কেউ বেরুতে পারেননি: ফায়ার সার্ভিসের মুস্তাফিজুর রহমান নামে এক ফায়ার ফাইটার বলেন, কারখানার ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার একই জায়গাতে সবাই মরে পড়েছিল। সেখান থেকেই মূলত অধিকাংশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, ভবনটির প্রতিটি গেইটেই কলাপসিবল গেইট দিয়ে তালা মারা ছিল। আবার প্রতিটি সিঁড়ি নেটের জাল দিয়ে আটকানো দেখা গেছে। হয়তো ওপরে উঠার সিঁড়ির মুখে নেট দিয়ে আটকানো থাকায় অনেকেই ছাদে যেতে পারেননি। তা ছাড়া সামনে দিয়ে বের হওয়ার সুযোগও ছিল না আগুনের কারণে। যে কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ছাদের সিঁড়িও বন্ধ ছিলো: কারখানায় আগুনের সময় ভবনের একটি সিঁড়ি বন্ধ ছিল। ‘ছাদের সিঁড়ি বন্ধ না থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচতো। আমরা একটি ভবন থেকে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। তারা যদি ছাদে উঠতে পারতেন, তাহলে তাদের প্রাণে বাঁচানো যেত।’ ছয় তলা ভবনের ছাদে ওঠার জন্য দুটি সিঁড়ি রয়েছে, যার একটির দরজা বন্ধ ছিল।
সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে ছিল ভয়াবহ আগুন। ফলে তারা নিচের দিকে আসতে পারছিলো না। আবার তালাবদ্ধ থাকায় ছাদেও যেতে পারেননি নিহত শ্রমিকরা।
প্লাস্টিক ও কেমিক্যালে ভর্তি ছিল জুসের কারখানাটি: প্লাস্টিক দানা, বোতল, কর্ক, পলিথিন, কার্টুন, মোবিল ও খাবারের কেমিক্যাল ভর্তি ছিলো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুসের কারখানাটি। বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল থাকায় আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের বেগ পেতে হয়েছে।
কারখানাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন কেমিক্যালের ড্রাম, কন্টেইনার ও প্লাস্টিকের বোতল। কারখানাটিতে জুস, লাচ্ছি, সেমাইসহ বিভিন্ন পণ্য বোতলজাত ও প্যাকেটিং করা হতো। ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় ছিল বিভিন্ন কেমিক্যালের গোডাউন।
কারখানার শ্রমিক ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, কারখানাটি তিন শিফটে পরিচালিত হয়। যেখানে কাজ করেন দুই হাজারের বেশি শ্রমিক। কারখানাটিতে জুসের কর্ক, লেভেল প্যাকেটিং’র কাজ করা হয়।
লাশ শনাক্ত করা যায়নি, করতে হবে ডিএনএ টেস্ট: বেশিরভাগ লাশের একটিও শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে এ কথা জানায়।
সবগুলো মরদেহ আগুনে পুড়ে ঝলছে গেছে। প্রয়োজনে তাদের মরদেহ ফ্রিজিং করা হবে। আত্মীদের সঙ্গে ডিএনএ সিম্পল মিলিয়ে পরবর্তীতে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
ভবনের কিছু কিছু স্থানে এখনো জ্বলে উঠছে আগুন: কারখানার আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। শুক্রবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবনের কিছু কিছু স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন জ্বলে উঠতে দেখা গেছে। পুরো আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মূল আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও বিক্ষিপ্তভাবে ভবনের কিছু কিছু স্থানে আগুন জ্বলে উঠছে। পুরো আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস এখনো কাজ করছে।
এদিকে আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে চারতলা থেকে তিনজন লাফিয়ে পড়েন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের ভাষ্যমতে, ভবনটিতে ৪০০-৪৫০ জন মানুষ ছিল।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন