১২০ কোটি টাকা নিয়ে ভারতে চম্পট গোপাল আগরওয়ালা দম্পতি
নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে আগারওয়ালা দম্পত্তি ১২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। এরা হলেন গোপাল আগরওয়ালা ও তার স্ত্রী দীপা আগরওয়ালা। উভয়ই সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখার গ্রাহক।
এ বিষয়ে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক এমএ কাশেম বলেন, ব্যাংকে এসব ঘটনা ঘটার কারণ হলো বর্তমান চেয়ারম্যান নিজের লোককে ম্যানেজার হিসাবে বসিয়েছিলেন। কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা নেই, চরম স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে সম্প্রতি ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) আমরা যোগ দেইনি। ৫ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ছাড়াই এজিএম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক যে ঋণ দেয়, তা উদ্যোক্তাদের টাকা নয়। এগুলো গ্রাহকের আমানতের টাকা। আর গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় সবাইকে কাজ করতে হবে।
আগারওয়ালা দম্পতির জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ এবং শুভ ফিড প্রসেসিং নামে তাদের নামসর্বস্ব দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা ২০১৯ সালের ৭ জুলাই চিরতরে ভারতে চলে গেছেন। যাদের বাংলাদেশে সব সম্পত্তির মোট মূল্য সর্বোচ্চ ৩০ কোটি টাকা হতে পারে। বর্তমানে তারা পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি সেবক রোডে বসবাস করছে। এ দম্পতির ছেলে রাজেন আগরওয়ালা এবং মেয়ে উমা আগরওয়ালা আগে থেকে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ব্যাংকের টাকা আদায়ে দম্পতিকে বাধ্য করা যেতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বললেন, ব্যাংকের সুশাসনের অভাবে এ অবস্থা। আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, টাকা নেওয়ার সময় ওই গ্রাহকের রেকর্ড ভালো ছিল।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছে, ব্যাংক খাতে এ ধরনের ঘটনার কারণ হলো সুশাসনের অভাব। সুশাসন না থাকায় ব্যাংকের ভেতরের লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশে এসব ঋণ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যে যোগ্য নয়, সেও ঋণ পায়, আবার যে পরিমাণ পাওয়ার যোগ্য তার চেয়ে বহুগুণ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিদেশে টাকা পাচার, পালিয়ে যাওয়া বা টাকা মেরে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা খেয়ে ফেললেও বর্তমানে কোনো শাস্তি নেই। উলটো পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোপাল আগরওয়ালা (৫৬), পিতা মৃত : জগন্নাথ আগারওয়ালা, মাতা : মৃত সীতা দেবী এবং স্ত্রী দীপা আগরওয়ালা। এই দম্পতি নওগাঁ সদরের লিটন ব্রিজ মোড়ের, মেইন রোডে ৩২০ নং বাড়ি জগন্নাথ ভবনে থাকতো। গোপাল আগারওয়ালা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জগন্নাথ নগরে জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে অটোরাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। স্ত্রী দীপা আগারওয়ালা একই স্থানে ‘মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিং’ নামের একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মালিক।
২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত নিজ নামে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা থেকে ৩ কিস্তিতে ৭৫ কোটি টাকা এবং দীপা আগারওয়ালা ২ কিস্তিতে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়। গোপালের নিজ নামে নেওয়া ৭৫ কোটি টাকার মধ্যে ওডি (ওভার ড্রাফট) ঋণ ৫০ কোটি, মেয়াদি ঋণ ১০ কোটি এবং টাইম লোন ১৫ কোটি টাকা। আবার স্ত্রীর নামে নেওয়া ২৫ কোটি টাকার মধ্যে ওডি ২০ কোটি এবং টাইম লোন ৫ কোটি টাকা। ঋণ নেওয়ার সময় বগুড়ায় ৪৩৪ শতক ও দিনাজপুরে ৪০১ দশমিক ৫০ শতক জমি বন্ধক দিয়েছেন। বর্তমানে সুদসহ তা ১২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ব্যাংকটির পরিচালক এমএ কাশেম বলেন, শুধু নওগাঁ নয়, আরও কয়েকটি ব্রাঞ্চে এরকম ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে পাবনা এবং চট্টগ্রাম অন্যতম। তিনি বলেন, ঘটনা আমরাও কিছুটা জানি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন