কাঁঠালের চিপস চাটনি জেলি জুসসহ ২০ পণ্য
গাজীপুর সংবাদদাতা: কাঁঠাল সংরক্ষণের আধুনিক কোনো পদ্ধতি না থাকার কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় কৃষকদের। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ফল বিজ্ঞানীদের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর মোট ১০.৩৮ লাখ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। কিন্ত উৎপাদিত এ কাঁঠালের শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতির সম্মুখীন হন কাঁঠাল চাষিরা।
কাঁঠাল চাষিদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এবং কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে বছরব্যাপী কাঁঠাল প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের ফল বিজ্ঞানীরা কাঁঠাল সংরক্ষণ ও বহুমুখী ব্যবহারের ১২টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই তারা কাঁঠালের প্রায় ২০টির মত পণ্য উৎপাদন করেছেন। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য তুলনামূলকভাবে স্বল্পমূল্যের যন্ত্রপাতিও উদ্ভাবন করেছেন। অন্যদিকে এ প্রযুক্তিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে প্রায় ২৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদর দফতর এলাকায় কয়েক হাজার কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এসব গাছে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কাঁঠালের ফলন হয়। কিন্ত কাঁঠালের মৌসুমে সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল নষ্ট হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদর দফতরের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তিনি কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেন। এছাড়াও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবছর কাঁঠাল নষ্ট হওয়ার বিষয়টিও দৃষ্টিগোচর হয় দেশের ফল বিজ্ঞানীদের।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা ২০১৯ সালে কাঁঠাল সংরক্ষণে গবেষণা শুরু করেন। প্রায় তিন বছরের গবেষণায় তারা এ পর্যন্ত ১২টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। যেগুলোর সফল বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ‘কাঁঠাল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, পদ্ধতি ও বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এ গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ।
নতুন উদ্ভাবিত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাঁচা এবং পাকা দুইভাবে কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করা যায়। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় ২০ ধরনের খাদ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাঁঠালের চিপস, আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি, কাঁঠালসত্ত্ব, ফ্রেশ কাট (কাঁচা), ফ্রেশ কাট (পাকা), চিনির দ্রবণে কাঁঠাল, কাঁঠাল শুঁটকি, আচার, লবণ দ্রবণে কাঁচা কাঁঠাল (দীর্ঘসময় সংরক্ষণের জন্য), ড্রাইড পাউডার, ভেজিটেবল রোল, অসমোটিক্যালি ডিহাইড্রেট জ্যাকফ্রুট, রোস্টেড জ্যাকফ্রুট সিড ইত্যাদি।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন