সরকারের ১৪ পাটকল লিজ নিতে ৫১ আবেদন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি ১৪টি পাটকল লিজ নিতে ৫১টি আবেদন জমা পড়েছে। বাংলাদেশ জুটমিলস কর্পোরেশনের (বিএজএমসি) হাতে থাকা মোট ২২টি পাটকলের মধ্যে সরকার লিজ দিতে চেয়েছিল ১৭টি, কিন্তু বাকি তিনটির জন্য কোন আবেদনপত্রই জমা পড়েনি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই পাটকলগুলো যোগ্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের ওপর ভিত্তি করে পাটকল শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত রেখে সরকারি পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় তারা। ১৭টি পাটকল লিজ দেওয়ার জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে ২৭ এপ্রিল আন্তর্জাতিক দরখাস্ত আহ্বান করে বিজেএমসি। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন ১৭ জুন পর্যন্ত ১৪টি জুটমিলের জন্য ৫১টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। আপাতত এই ১৪টি পাটকল লিজ দেওয়ার পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
যে ১৪টি পাটকলের জন্য লিজ আবেদন জমা পড়েছে সেগুলো হচ্ছে- নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস, চট্টগ্রামের কেএফডি, যশোরের কার্পেটিং জুট মিলস, নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলস, যশোর জুট ইন্ডাষ্ট্রিজ, রাজশাহী জুট মিলস, খুলনার ইস্টার্ন জুট মিলস, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস, খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস, চট্টগ্রামের গুল আহমদ জুট মিলস, চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিলস, চট্টগ্রামের এম এম জুট মিলস, খুলনার দৌলতপুর জুট মিলস এবং চট্টগ্রামের আর আর জুট মিলস।
যে তিনটি পাটকল লিজ নিতে কোনও আবেদনপত্র জমা পড়েনি তার সবগুলো খুলনার। মিলগুলো হচ্ছে- প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস, খালিশপুর জুট মিলস ও স্টার জুট মিলস। আর যে ৫টি পাটকল সরকার শুরু থেকেই নিজেদের হাতে রাখতে চেয়েছে সেগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রামের বাগদাদ-ঢাকা-কার্পেট ফ্যাক্টরি, ডেমরার করিম জুট মিলস, ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস, খুলনার আলীম জুট মিলস ও চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলস।
এই ৫টি পাটকলের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অদূরে ডেমরায় অবিস্থত করিম জুটমিল, লতিফ বাওয়ানি জুটমিল ও চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলস শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় সেখানকার জমির দাম অন্য মিলগুলোর জমির দামের তুলনায় অনেক বেশি। তাই জমির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এই তিনটি মিল লিজ না দিয়ে সরকার নিজে থেকে কিছু করতে পারে কিনা তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়য়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামের নর্থ কাট্টলীতে অবস্থিত বাগদাদ-ঢাকা-কার্পেট ফ্যাক্টরি লিমিটেড নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। তাই এটির বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে খুলনার অটরা শিল্প এলাকায় অবস্থিত আলীম জুট মিলসকে কেন লিজ দেওয়ার তালিকায় রাখা হয়নি, তা জানা যায়নি।
লিজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহম্মদ আবুল কালাম জানান, বিজেএমসির একজন পরিচালকের নেতৃত্বে ওপেনিং কমিটির কাজ শেষ হয়েছে। এরপর বিজেএমসির অপর একজন পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত মুল্যায়ন কমিটি আবেদনপত্রগুলো যাচাই বাছাই করবে। কমিটি একই সঙ্গে দেখবে সরকারি পাটকলগুলো লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) অনুযায়ী আবেদনপত্রগুলো ঠিক আছে কিনা। সব কিছু ঠিক থাকলে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চাওয়া হবে। এরপর প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পর্যালোচনা শেষে সরকারের পছন্দ হলে সরকারি পাটকলগুলো আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
বংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী আমরা অতি দ্রুত এসব সরকারি পাটকল বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি। আপাতত প্রথম কাজ ইওআই (ইনভাইটেশন ফর এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট) পর্বটি শেষ করলাম। পরের ধাপের কাজ মুল্যায়ন কমিটির। আশা করছি চলতি ২০২১ সালের মধ্যে প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করে পাটকলগুলো লিজগ্রহীতাদের কাছে হস্তান্তর করতে পারব।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন