অচ্ছুত জীবনে সমৃদ্ধির আলো
নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমিসহ সেমিপাকা ঘর পেয়ে জীবন পাল্টে গেছে অনেকের। যাপিত জীবনে এসেছে স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা। অচ্ছুত জীবনে আলো হয়ে সমৃদ্ধ জীবনের পথপ্রদর্শন করছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আসা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বছরের জানুয়ারিতে দেশের ৭০ হাজার মানুষের সঙ্গে কাঁঠালতলার এসব ছিন্নমূল মানুষের হাতেও জমির দলিলসহ সেমিপাকা ঘরের চাবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরেজমিনে জানা যায়, কাঁঠালতলা গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৬৪ ছিন্নমূল পরিবার ২ শতাংশ জমিসহ সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নানা সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি জমিতে ছাপড়া করে বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থেকেছেন। ভ্যান চালিয়ে, মাটি কেটে বা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এরা। তাদের জীবনে বাড়ি-ঘরের স্বপ্ন তো দূরের কথা, বেঁচে থাকা বা টিকে থাকাই ছিল বড় বিষয়। এদের জীবনে যেন ঐশ্বরিক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প। জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দিয়ে তাদের জীবনচিত্রই পাল্টে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে মানুষের জীবনে জেগেছে আশা, বেড়েছে আত্মবিশ্বাস।
কাঁঠালতলায় আশ্রয় পাওয়াদের একজন ফুলি বেগম (৬০)। ১২ বছর যাবত স্বামী পরিত্যক্তা তিনি। কসমেটিকস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই মেয়ে নিয়ে তার সংগ্রামের জীবন। উপজেলার শ্রীনগর এলাকায় সরকারি জায়গায় ছাপড়া করে ছিলেন ফুলি বেগম।
তিনি বলেন, ‘ওপর থেকে লোক এসে আমাদের ফটোক (ছবি) তুলে নিয়ে গেলো। ঘরের দরখাস্ত দিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে (আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে) এনে দিয়েছেন। যেখানে ছিলাম, এখন তার চেয়ে ভালো আছি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।’
ফুলি বেগমের প্রতিবেশী মালিম আলীরও (৫৫) কোনো জায়গা ছিল না। সরকারের কাছে আবেদন করে জায়গা ও সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন। তাতে তিনি সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে আছেন বলে জানিয়েছেন। মালিম আলী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দিয়েছেন। তার নামে দোয়া করি, আল্লাহ তাকে বাঁচায়ে রাখুক, শান্তিতে থাকুক। তার উছিলায় আমরাও ছেলে-মেয়ে নিয়ে শান্তি থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘর পেয়ে এখন ভালো আছি। খুব শান্তিতে আছি। ছোটবেলা থেকেই ভ্যান চালাই। পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে আগে অন্যের বাড়ি থাকতাম। এখন এ বাড়ি পেয়ে খুব শান্তিতে আছি। আল্লাহ ছাড়া এমন শান্তি কেউ দিতে পারবে না, আর যে লোক দিয়েছে তার উছিলায় আছি।’
আরেক উপকারভোগী ঝুমা সর্দার (৫০) মাটি কাটেন, কৃষি কাজ করেন। একটি মেয়ে নিয়ে পুঠিমারিতে বাপের বাড়িতে ছিলেন। আগে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতেন। চোরসহ নানা উৎপাতের ঝামেলা ছিল। ঘরের দরজাও ছিল না। তিনি বলেন, ‘এখন ঘরে দরজা দিয়ে আরামে একটু ঘুমাই। এখন খুব আরামে আছি।’
ফুলি বেগম, মালিম আলী আর ঝুমা সর্দারের মতো কাঁঠালতলায় জুন পর্যন্ত ১০৯ পরিবার আশ্রয় পেয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলায় আশ্রয় পেয়েছে ৬৪০ পরিবার। এভাবে সারাদেশে ইতোমধ্যে ৭০ হাজার মানুষ বাড়ি পেয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত তিন লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনবার্সিত হয়েছে। ২০ জুন আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দেয়া হচ্ছে। এ বছর আরও এক লাখ পরিবারকে জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে মোট প্রায় ১০ লাখ পরিবার আসবে আশ্রয়ণের আওতায়।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, একসঙ্গে এতো মানুষকে জমিসহ ঘর দেয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম ও সর্ববৃহৎ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বিশাল ও মানবিক এ উদ্যোগ সারাবিশ্বের কাছে দারিদ্র্য বিমোচনে সক্ষমতা প্রমাণের একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল অসহায় আশ্রয়হীন মানুষকে শুধু সেমিপাকা বাড়িই দেয়া হচ্ছে না, সঙ্গে সঙ্গে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের নামে জমির মালিকানাসহ সারাজীবনের একটি স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হচ্ছে। এতে মানুষের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন এসেছে, নারীর ক্ষমতায়নও হচ্ছে।
ড. কায়কাউস বলেন, এখান থেকেই এক সময় প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আমলা, রাজনীতিক তৈরি হবে বলে আমরা আশাবাদী।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা ছিন্নমূল এসব মানুষকে পুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের জন্য সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তা, খেলার মাঠ, গাছপালাসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করছি। কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলছি। এটি দারিদ্র্য বিমোচনে মাইলফলক হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন