ফেরত আসছেনা ঋণ, ব্যাংক চলবে কীভাবে?
নিজস্ব প্রতিবেদক: লাভের আশায় একজন আমানত রাখে, আরেকজন ঋণ নেয়। মোটা দাগে এই দিয়েই চলে ব্যাংক। ব্যাংক পরিচালনার এই একটিই সূত্র। এই সূত্র তখনই ঠিক থাকে যখন ঋণের টাকা সময়মতো ফেরত আসে। অর্থাৎ ঋণ নেওয়া ব্যক্তি ব্যবসা করে সময়মতো ব্যাংকের টাকা ফেরত দিলে তবেই ব্যাংক সেখান থেকে লাভবান হয়। আবার ফেরত পাওয়া সেই টাকা থেকেও নতুন করে ঋণ দিতে পারে ব্যাংক। তবে এই সূত্র তখনই ভেঙে পড়ে, যখন ঋণের টাকা ফেরত আসা বন্ধ হয়ে যায়। আর এতে করে তখন ঝুঁকিতে পড়ে সাধারণ আমানতকারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, গত মার্চ থেকেই ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের টাকা ফেরত আসছে না। এর ফলে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমীন বলেন, সবাই যদি ঋণের টাকা ফেরত না দেয়, তাহলে ব্যাংক তো সমস্যায় পড়বেই। তবে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে আমানতকারীরা। কারণ ঋণ বিতরণ করা ৯০ শতাংশই আমানতকারীদের টাকা। তবে সব আমানতকারী একসঙ্গে গিয়ে টাকা চাইবে না। তিনি বলেন, খারাপদের পাশাপাশি ভালো গ্রাহকরাও সুযোগ পেয়ে এখন ঋণের টাকা ফেরত দিতে চাইছে না। এর ফলে পরবর্তীতে বড় ধরনের সংকটে পড়বে ব্যাংক।
এদিকে, লকডাউনের কারণে বলা চলে ঋণ খেলাপি হওয়া ঠেকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি না দিলেও কোনও ব্যাংক ওই গ্রাহককে ঋণ খেলাপি করবে না। আবার এই সময়ে ঋণের ওপর কোনও ধরনের দ- ফি আরোপও করা যাবে না। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, পরে এই সুযোগ বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপি হওয়া কমে গেছে। আবার কিস্তি আদায় না হওয়ায় অনেক ব্যাংকের টাকা আটকেও গেছে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংকের ঋণ আদায় না হলেও গ্রাহক খেলাপি হচ্ছে না। এর ফলে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর ফলে ঋণ কমে গেছে। এতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি অধিকাংশ ব্যাংকের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে লোকসানি শাখাও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এই তিনটি ব্যাংক পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশও ঋণ দেয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির স্থানীয় পর্যায়ের শাখা বা করপোরেট অফিসের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরে সোনালী ব্যাংক ২৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছিল, তবে জুন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। আর জনতা ব্যাংকের ১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় করেছে আড়াই কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ২৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০টি। আর জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখা ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৯। বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটি ৩ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। অথচ গত বছরে ২৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল তারা। অবশ্য সোনালী ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে মাত্র ৯৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে।
পুরো বছরে রূপালী ব্যাংক খেলাপি ঋণ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় করেছে দেড় কোটি টাকা। ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ১১ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬টি। অগ্রণী ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করলেও আদায় করেছে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। আর লোকসানি শাখা বেড়ে হয়েছে ১৮ থেকে ৭৮। প্রথম ৬ মাসে নিট মুনাফা করেছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা, গত বছরের পুরো সময়ে হয়েছিল ১০৭ কোটি টাকা।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন