ফেসবুক আইডি হ্যাক করে মাসে আয় লাখ টাকা!
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার ঘটনায় একটি চক্রকে শনাক্ত করেছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ‘টিম সিলেট’ নামে ওই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ জন, বিভিন্নজনের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে যাদের প্রত্যেকের মাসিক আয় এক-দেড় লাখ টাকা।
শনিবার ভোরে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে র্যাব-২।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ফেসবুক হ্যাকিংয়ে ব্যবহৃত চারটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন কোম্পানির ২০টি সিম কার্ড, নকল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির অ্যাপস এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র শিল্পীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার আলামত জব্দ করা হয়।
র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) প্রাযুক্তিক সহায়তায় ‘টিম সিলেট’ নামে একটি হ্যাকার গ্রুপকে শনাক্ত করা হয়। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ জন, যারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাকিংয়ে জড়িত।
হ্যাকার গ্রুপের দুই সদস্য সিলেট থেকে বাসযোগে ঢাকায় আসছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে মহাখালী অবস্থান নেন র্যাব-২ সদস্যরা। ভোর ৬টার দিকে এনা পরিবহনের বাস থেকে নামার পর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে দুইজনকে আটক করা হয়।
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, একইসঙ্গে তারা প্রতিনিয়ত সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি হ্যাক করে আসছিল। হ্যাক করা আইডি ফেরত পেতে তারা ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। হ্যাকিং করে প্রতি মাসে তারা প্রত্যেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন।
র্যাব জানায়, এ গ্রুপের মূল হোতা নাসির যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক সাইবার অপরাধী, যে কিছুদিন আগে সাইবার অপরাধের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছিলো। নাসিরই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হ্যাকার গ্রুপে লোক নিয়োগ করে। এরপর অনলাইনে ভিডিও টিউটরিয়ালের মাধ্যমে ফেসবুক আইডি হ্যাক করার প্রক্রিয়া শেখায়। আইডি ফেরত দিতে সতর্কতার সঙ্গে অর্থ লেনদেনসহ সব প্রক্রিয়াটি নাসির সমন্বয় করে। দেশে সে একটি সাইবার অপরাধী চক্র গড়ে তুলেছেন।
ফেসবুক আইডি হ্যাক করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে র্যাব জানায়, যে ফেসবুক আইডিটি হ্যাকাররা দখলে নিতে চায়, সেটির বিরুদ্ধে হ্যাকাররা বারবার ফেসবুকে মিথ্যা কারণ দেখিয়ে রিপোর্ট করে আইডি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। পরে দুর্বল পাসওয়ার্ড কিংবা ‘টু স্টেপ ভেরিফিকেশন’ না থাকায় নিজেদের তৈরি ফেইক ই-মেইল দিয়ে ফেসবুকের কাছে অ্যাকাউন্টের মালিক দাবি করে আইডি দখলে নেয়।
দ্বিতীয়ত, হ্যাকাররা টার্গেটেড আইডির জন্য প্রয়োজনীয় ফেইক জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে ফেসবুকে দেয়। এরপর ফেসবুক তাদের ফেইক ই-মেইলে অ্যাকাউন্ট রিকভারি লিঙ্ক দেয়। লিঙ্কটি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড রিসেট করে অ্যাকাউন্টের পূর্ববর্তী তথ্য যেমন- ই-মেইল, ফোন নম্বর পরিবর্তন করে দেয়। একইসঙ্গে অ্যাকাউন্টে তিনটি বিশ্বস্ত অ্যাকাউন্ট অ্যাড করে দেয়, যা হ্যাকারদের নিজেদেরই ফেইক অ্যাকাউন্ট। ফলে মূল আইডির মালিকের পক্ষে অ্যাকাউন্ট রিকভারি বা ফেরত পাওয়া সম্ভব হয় না।
তৃতীয়ত, হ্যাকার গ্রুপ টার্গেটেড ফেসবুক আইডির মালিক বা তার পরিচিত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে আইডি ফেরত পেতে টাকা দাবি করে। অন্যথায় আইডির ওয়ালে বিভিন্ন কুরূচিপূর্ণ ছবি পোস্ট করে বা মেসেঞ্জারে তার নিকটস্থ বন্ধুদের কাছে স্পর্শকাতর ছবি বা মেসেজ পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন