‘গরিবের ঢেউটিন’ সুন্দরবনের গোলপাতা
নিজস্ব প্রতিবেদক : তুলনামূলক কম দাম, শক্ত ও অধিক টেকসই হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের ঘরের ছাউনির কাজে ‘গরিবের ঢেউটিন’ হিসেবে খ্যাত সুন্দরবনের গোলপাতা। ঘরের চালে গোলপাতার ছাউনি উপকূলসহ বিভিন্ন জেলায় খুব জনপ্রিয়। এ পাতার ছাউনি ঘর গরমের সময় ঠা-া ভাব এবং শীতের সময় গরমভাব অনুভূত হয়। গোলপাতা দিয়ে ভালোভাবে ঘরের ছাউনি দিলে ৪ থেকে ৫ বছর পার হয়ে যায়।
সুন্দরবনের বড় একটি অংশ জুড়েই আছে গোলপাতার ছড়াছড়ি। সারি সারি দীর্ঘ গোলপাতা দেখে মনে হয় গোলপাতার বন। ৩ থেকে ৪ বছরের নারিকেল চারার আকৃতি বিশিষ্ট গোলপাতা গাছ ঝাড় আকারে বিন্যস্ত রয়েছে। অনুরূপভাবে শেখের খাল, টেপারভাড়ানি খালের দু’পাড়সহ বনের প্রায় সব খালের পাড়ে সারি সারি গোলাপাতা গাছ।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, গোলপাতা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতি। গোলপাতা সুন্দরবনের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক অর্থকরী সম্পদ। বহুমুখী ব্যবহার ও সহজলভ্যতার কারণে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রায় ১৬টি জেলার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরবাড়ি ও আশ্রয়স্থাল নির্মাণে গোলপাতা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গোলপাতা সংগ্রহের কাজ চলে।
প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা সংগৃহীত হয়। এ কাজে প্রতিবছরের মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার লোক নিয়োজিত থাকে। সুন্দরবন থেকে যারা গোলপাতা সংগ্রহ করেন তাদেরকে বাওয়ালি নামে ডাকা হয়। যদিও বাঘের আক্রমণের কারণে গোলপাতা সংগ্রহ করা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তথাপিও জীবন ও জীবিকার তাড়নায় এত অধিক সংখ্যক লোক এ পেশায় নিয়োজিত থাকে। এছাড়া নদী পথে গোলপাতা পরিবহনে ছোট-বড় সবমিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার নৌকা ব্যবহৃত হয়। ছাউনি ছাড়াও রান্নার জ্বালানি হিসেবে ধরাতে শুকনো গোলপাতা পাতা ব্যবহার হয়। পাতার ডাটা জ্বালানি হিসেবেও বেড়া নির্মাণে, মাছ ধরার জন্য উপযুক্ত আশ্রয়স্থল তৈরির কাজে পাতা ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া পাতার ডাঁটা, মাছ ধরার সময় জালে ভাসিয়ে রাখার জন্য জেলেরা ব্যবহার করে থাকে। গোলপাতার সাহায্যে ছাতা, সানহ্যাট, রেইনকোর্ট, ঝুড়ি, মাদুর, থলে, খেলনা প্রভৃতি তৈরি করা হয়। গোলফল অনেকটা তালের মতো। কচি ফলের শাঁস খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই শাঁস খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। গাছের মাথি বিশেষভাবে রান্না করে সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা যায়। গোলগাছের মঞ্জুরি হতে রস সংগ্রহ করা যায়। এই রসে শর্করার পরিমাণ শতকরা প্রায় ১৮ শতাংশ। যা চিনি তৈরিতে ও টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়াও রস হতে ভিনেগার তৈরি হয়।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল-আল-মামুন বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ৬৩.৪৬ হাজার কুইন্টাল গোলপাতা আহরণ হয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন