৯ মাস বেতন নেই, দুর্বিষহ জীবনযাপন চিনিকলের শ্রমিকদের
রংপুর সংবাদদাতা: ৯ মাস ধরে বেতন নেই। পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। চিনিকলগুলো বন্ধ না রেখে সরকার একটু নজর দিলেই আমরা বাঁচি। দীর্ঘদিন ধরে চিনিকলে মাড়াই বন্ধ না থাকায় আমরা বেতন পাচ্ছি না। এখন ধুঁকে ধুঁকে মরছি।’
এভাবেই অতিকষ্টে কাটানো দিনাতিপাতের কথাগুলো বলছিলেন শ্যামপুর চিনিকলের অফিস সহায়ক ও এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সদস্য আমিনুল ইসলাম।
সম্প্রতি রংপুর জেলার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্যামপুর চিনিকল এলাকায় গেলে কথা হয় সেখানকার কর্মকর্তাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের।
চিনিকলের কারখানা বিভাগের জুনিয়র ইলেকট্রিশিয়ান ও এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সহসভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘সরকার দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি চিনিকলে মাড়াই বন্ধ রেখেছে। এভাবে আর কত দিন চলবে, এখনো বলা যাচ্ছে না। আমাদের বকেয়া বেতন-ভাতার কোনো সুরাহা হয়নি। সন্তানদের পড়ালেখা, সংসার চালানোসহ নিত্যখরচাপাতি করতে না পেরে আমাদের অবস্থা নিম্ন স্তরে যাচ্ছে।’
শ্যামপুর চিনিকলে কর্মরত আমিনুল-সাত্তারের মতো শত শত শ্রমিক-কর্মচারী চোখে এখন অন্ধকার দেখছেন। চিনিকলের ওপর নির্ভর করে সংসার চালানো এখানকার শ্রমিক-কর্মচারীরা বলছেন, বেতনসহ অন্য খাত মিলে প্রায় ২২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চিনিকলটিতে বিকল্প উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আট-নয় মাস ধরে বেতনও নেই। এখনকার সবাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নতুন বিনিয়োগে কৃষিনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে কিছু প্রস্তাবনা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
অফিস ভবন থেকে বেরিয়ে কারখানার প্রধান ফটক পেরিয়েও চোখে পড়ে একই চিত্র। কেউ নেই, চারপাশ ফাঁকা। দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকায় চিনিকলের যন্ত্রপাতিগুলোর রং বদলে গেছে। বেশির ভাগ নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিকল হয়ে পড়ে আছে আখ পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টরগুলোসহ কয়েকটি ট্রাক। প্রায় ১১১.৪৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা রংপুরের একমাত্র ভারী শিল্পকারখানা এলাকাটি এখন যেন পোড়োবাড়ি (ভূতের বাড়ি)।
প্রস্তাব প্রসঙ্গে আহ্সান হাবিব বলেন, চিনিকলটির নিজস্ব জায়গায় এক হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আলুর কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করা যেতে পারে। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ২০ কোটি টাকা হতে পারে। তবে কোল্ডস্টোরেজ করা গেলে বছরে এক থেকে দেড় কোটি লাভ করা সম্ভব। এ ছাড়া এখানে পিপি ব্যাগ ও চিনির প্যাকেট তৈরির কারখানা স্থাপন করলে বছরে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ হতে পারে। পাশাপাশি আলু, আম, ভুট্টা, ঘিরে কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন করা গেলে বার্ষিক কয়েক লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন