মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে কাউয়াদীঘি হাওর। এই হাওরের মানুষের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ধান চাষ। কিন্তু হাওরাঞ্চলে সেচসুবিধা না থাকায় প্রায় দেড় হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকছে। কৃষকদের দাবি, হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা লাছনদীতে সøুইস গেট নির্মাণ করা হলে সেচকাজে সুবিধা হবে।
কাউয়াদিঘি হাওরের গোয়ালিকারা এলাকায় দেখা যায়, এ সময় হাওর ফসলে ভরপুর থাকলেও এবার তা শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। আমন ধান কেটে নেয়ার পর উজানের বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে খড় পড়ে আছে। ভাটির দিকে জমির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লাছ নদী। এ নদী হচ্ছে হাওরের প্রাণ। কয়েকজন সেচপাম্প লাগিয়ে নালা তৈরি করে জমিতে পানি নিচ্ছেন। কেউ প্লাস্টিকের ২০০-৩০০ ফুট দীর্ঘ পাইপ লাগিয়ে পানি নিচ্ছেন জমিতে। এতে তাদের বাড়তি খরচ হচ্ছে।
কৃষকরা বলেন, কাউয়াদীঘি হাওরের গোয়ালিকারা এলাকায় একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হলে হাওরের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রায় এক দশক ধরে তারা এ দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না।
কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, এই রাস্তার ডান ও বামে অনেক জমিতে পানির অভাবে চাষাবাদ হচ্ছে না। হাওরে যে অল্প কৃষি হয়, সেগুলোর জন্য কৃষকরা অনেক খরচ করে সেচ দিয়ে চাষাবাদ করেন। ডিজেলের দাম এখন অনেক বেড়েছে। মেশিনের অভাবে অনেক কৃষক সেচ দিতে পারেন না। একটা স্লুইস গেট হলে এত সমস্যায় পড়তে হতো না।
আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা হাওর অঞ্চলের মানুষ। কৃষি হচ্ছে আমাদের আয়ের প্রধান উৎস। এর মধ্যে বোরো ধান প্রধান। একটি স্লুইস গেটের অভাবে আমাদের হাজার হাজার একর জমি আজ পতিত। আমার যা চাষাবাদ করি কিন্তু পানির অভাবে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। লাছ নদী থেকে অনেক খরচ করে কিছু পানি সেচ দিয়ে আনলেও তাতে কাজ হয় না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ও একাটুনা ইউনিয়নে পড়েছে এসব অনাবাদি জমি। এই জমির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার একর। এলাকার কৃষকরা দীর্ঘ দিন ধরে গোয়ালিকারা এলাকায় একটি স্লুইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে সেচসুবিধা সৃষ্টির দাবি করে আসছেন। ২০১২ সাল থেকে সংস্থার পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি পাউবো প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। গোয়ালিকারায় একটি জলকপাট হলে হাওরে ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদিত হবে।
ইটা ইসলামী সমাজকল্যাণ সংস্থার সহ-সভাপতি রাজন আহমদ বলেন, লাছ নদীতে একটা স্লুইস গেট নির্মাণের জন্য ১০ বছর ধরে কৃষকরা দাবি জানাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে স্লুইস গেট হলে কৃষকদের আর সেচ করতে হবে না। স্বাভাবিকভাবেই হাওরে পানি থাকবে। প্রায় দেড় হাজার একর অনাবাদি জমি কৃষির আওতায় আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক কাজী লৎফুল বারী বলেন, একটি স্লুইসগেট এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। এ এলাকায় সেচব্যবস্থা চালু করা হলে অনেক অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে। তবে জলকপাটটি কোন জায়গায় করলে সবার উপকার হবে, এর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে পাউবোকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান বলেন, পুরো এলাকাটিকে আমরা পর্যবেক্ষণ করে হেড কোয়ার্টারে প্রকল্প পাঠিয়েছি। আশা করি শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন