সরকারী বিধিনিষেধের ভয়াল থাবা: মামলার টাকা যোগাতে সড়কে নেমে দিতে হচ্ছে জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারী বিধিনিষেধে বন্ধ আছে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা। অন্যদিকে মোটরসাইকেলে একের অধিক যাত্রী উঠানোতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে পেটের তাগিদে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকরা নামছেন সড়কে। ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অলিগলি দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান সড়কে উঠলে ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিচ্ছে। মামলার টাকা উঠাতে ফের সড়কে নামলে জরিমানার দিতে হচ্ছে, এমন অভিযোগ চালকদের।
শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে কথা হয় বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে। তারা জানান, পেছনে যাত্রী দেখলেই মামলা দিচ্ছে পুলিশ।
চালক তাজুল ইসলাম জানান, লকডাউনে দুইদিন বের হয়েছেন। এর মধ্যে একদিন দুই হাজার টাকার মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। সেই মামলার টাকা উঠাতে ফের বের হলে আবার জরিমানা দিতে হয় তাকে। এ জন্য বেশ কয়েকদিন পেশা বদলে রিকশা চালাতে শুরু করেন তিনি। তবে রিকশায় যাত্রী কমে যাওয়া আর শারীরিক কষ্ট বেড়ে যাওয়ায় আবার মোটরসাইকেল চালাতে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের দ্বিতীয়দিন বের হইছিলাম। পরে আগারগাঁওয়ে পুলিশ ধরে। অনেক বলার পরও সেদিন দুই হাজার টাকার মামলা দেয় ট্রাফিক। তার পরের দিন কারওরান বাজারে পুলিশ ধরে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে। এরপর আর রাস্তায় নামি নাই। আজকে আবার নামলাম। এই কয়দিন রিকশা চালাইছি।’
লকডাউনে মোটরসাইকেল চালকরা বেশি ভাড়া চাইছে এমন অভিযোগে তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা অনেক দূরে যেতে চায়, এজন্য অনেক ঘুরে যেতে চায়। আর মামলা তো আছেই। দেখা গেল ৫০০ টাকা ট্রিপে গিয়ে দুই হাজার টাকার মামলা খেতে হয়।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনে চারজনের ফ্যামিলি চালাইতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বড় মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে। ছোট মেয়েকে সামনের বছর স্কুলে দিব। অতিকষ্টে চলছি। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারকর্য করে চলতেছি।’
আরেক মোটরসাইকেল চালক মানিক বলেন, ‘খালি পুলিশে ধরে। পেছনে দুইটা হেলমেট দেখলেই পুলিশে ধরছে। জরিমানা করে, মামলা করে। গাড়িতে যাত্রী দেখলে নামিয়ে দিয়ে দুই হাজার টাকার মামলা দেয়। আগে পেছনে নামায়ে দিলেও ধরলেই মামলা দেয়। গতকাল বের হইছিলাম, দুপুরে ২ হাজার টাকার মামলা খাইছি। অথচ যাচ্ছিলাম ফার্মগেট ২০০ টাকার খ্যাপ নিয়ে। গতকাল ১২০০ টাকার খ্যাপ মারছি, আর ২ হাজার টাকার মামলা খাইছি। তার মধ্যে আবার তেল ভরতে হইছে।’
তিনি বলেন, ‘দুপুরের পর আর বের হই নাই। আজকে সকাল থেকে যাত্রী একদম নাই। একটু পর পর ট্রাফিক সরায়া দেয়, নয়তো জরিমানা করে। শত অনুরোধেও মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। বেশিরভাগই মামলা দেয়। আমরা তো কোম্পানির কাগজপত্র দেখাইতে পারি না। ধরলেই মামলা দেয়।’
গত বছর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি হারিয়ে রাইড শেয়ারিং শুরু করেন বারেক মোল্লার বাসিন্দা সাহিন হাসান। গত বুধবার যাত্রী নিয়ে সাভার যাওয়ার সময় ট্রাফিক পুলিশ চার হাজার টাকার মামলা দেয়। ফের মামলার ভয়ে এখন তিনি প্রধান সড়ক এড়িয়ে চলছেন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ ধরলে ২-৪ হাজার টাকার মামলা দেয়। এখন ট্রিপ মারিনা, পরিচিত লোক দেখলে বা ধারে কাছে যদি কেউ যায় নিয়ে যাই। ১০ নম্বর থেকে ১ নম্বর, আগারগাঁও কিংবা শ্যামলীতে যাই। ভেতর দিয়ে যতটুকু যাওয়া যায়। মেইন রোডে উঠি না ৪ হাজার টাকার মামলা একবার খাইছি। আর কত খাব। এই জন্য রিকশার খ্যাপ মারি।’
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন