সরকারী বিধিনিষেধের খড়গ: সিএনজি অটোরিকশাচালক এখন খিচুড়ি বিক্রেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারী বিধিনিষেধের কবলে পড়ে বাঁচার লড়াই করে যাচ্ছেন দেশের অগণতি মানুষরা। তাদেরই একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব আবুল হোসেন। থাকেন রাজধানীর শনির আখড়ায়। সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে বন্ধ আছে সব ধরনের যাত্রী পরিবহন। পাঁচ সদস্যের সংসার চলবে কীভাবে? তাই এখন পেশা বদলেছেন আবুল হোসেন। তিনি এখন খিচুড়ি বিক্রেতা।
বাসা থেকে রান্না করা ৫০ প্যাকেট ডিম-গোশতের খিচুড়ি একটি পাত্র করে নিয়ে এসেছেন। টুলের ওপর রেখে ক্রেতাদের অপেক্ষায় আছেন। ড্রামে ভরে এনেছেন খাওয়ার পানিও। রাত ৮টায় খিচুড়ি বিক্রি শুরু করেন।
আবুল হোসেনের প্যাকেট খিচুড়ি জনপ্রিয় হয়েছে রাজধানীর কাজলা এলাকায়। খিুচড়ি কিনে পথের পাশে বসে খাচ্ছেন কেউ কেউ। অনেকে কিনে নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন।
আবুল হোসেন জানালেন, অনেক অসহায় মানুষ আসেন খাবারের আশায়। ক্ষুধার জ্বালা আবুল হোসেন বোঝেন। তাই, অসহায়দের যন্ত্রণাটাও বোঝেন তিনি। নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে তখন দুই-এক প্যাকেট খিচুড়ি বিলিয়েও দেন।
লকডাউনের কারণে রাত ৮টার পর খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনেকে খাবার কিনতে পারেন না। তাই, রাস্তার মোড়ে এসে ক্রেতার জন্য পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন আবুল হোসেন। বেচাকেনাও ভালোই। কম দাম আর পরিমাণ বেশি হওয়ায় অনেকে সেগুলো কিনছেন। বিশেষ করে শনির আখড়া-কাজলায় যারা কোরবানির পশু বিক্রি করতে এসেছেন, তারাই আবুল হোসেনের খিচুড়ি কিনছেন। ডিম-খিচুড়ি ৩০ টাকা। মুরগি-খিচুড়ি ৫০ টাকা।
আবুল হোসেন বলেন, ‘লকডাউনের কারণে এখন আর সিএনজি চালাতে পারি না। জমানো টাকাও নেই। কী করব? এজন্য খিচুড়ি বিক্রির পেশা বেছে নিয়েছি। নিজেই রান্না করে বাসা থেকে নিয়ে আসি। লকডাউনের কারণে খাবারের দোকান বন্ধ থাকে। অনেকের পেটে ক্ষুধা থাকে। টাকা থাকলেও কিনে খেতে পারে না। তাদের কথা চিন্তা করে এ ব্যবসা শুরু করেছি। তাদেরও উপকার হবে আবার আমারও কিছু টাকা আয় হবে। আমার তো পেট চালাতে হবে, ভাই। সন্ধ্যার পর বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে চলে আসি। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়েই সংসার চলে যাচ্ছে।’
আরমান আলী নামের এক গরু ব্যবসায়ী খিচুড়ি কিনে যাওয়ার সময় বলেন, ‘দোকানপাট বন্ধ আছে। কোথাও খাবার পাচ্ছিলাম না। দেখি, এখানে খিচুড়ি বিক্রি হচ্ছে। তিনজনের জন্য কিনেছি আমি। খিচুড়ির মান খারাপ মনে হচ্ছে না।’
কেউ দামাদামি করলে তাকেও খুব একটা নিরাশ করেন না আবুল হোসেন। মূল্য কমিয়ে তার হাতে ঠিকই খিচুড়ির প্যাকেট ধরিয়ে দেন তিনি।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন