সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী: নিজেদের জনগণের সেবক হিসেবে বিবেচনা করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক: আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদেরকে জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২ নভেম্বর) বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৪, ১২৫ এবং ১২৬তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ তুলে ধরে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের জনসেবায় আরও নিবেদিত প্রাণ হওয়ার পরামর্শ দেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারি ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।’ জাতির পিতার এ বক্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদেরকে জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ জনগণের সেবক হিসেবেই নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। জনগণের সেবা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং উন্নত করতে হবে।
নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যারা নবীন অফিসার তাদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি যখন কোনো এলাকায় কাজ করেন তখন সেই এলাকার উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখার সুযোগ পান।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে কোনো বাঙালি একমাত্র কর্নেল ছাড়া সচিব, জেনারেল ও মেজর জেনারেল হতে পারতো না। এখন আপনাদের (সরকারি কর্মকর্তা) মনে রাখা উচিত, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা সব কিছুই হতে পারছি। সে কথা মনে রেখেই সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ব্রত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, কোথাও কাজে নিযুক্ত হলে বিভিন্ন জন বিভিন্ন দেন-দরবার নিয়ে আসবে। তবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে। তাহলেই আমরা সঠিকভাবে উন্নতি করতে পারবো। আমি চাই আমাদের নবীন কর্মকর্তারা সেভাবেই ব্যবস্থা নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের মানুষের কল্যাণ করার জন্যই বাবা-মা-ভাই হারিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতা যে ভাগ্যহত মানুষদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তাদের মুখে তিনি হাসি ফোটাবেন- এটাই তার লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা স্মরণ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এ সময় প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া অবস্থা থেকে একরকম জোর করে দেশে ফিরে সমগ্র বাংলাদেশ তিনি চষে বেড়িয়েছেন। আর দেখেছেন হাড্ডিসার, কঙ্কালসার মানুষের সারি, পায়ে ন্যূনতম স্যান্ডেলটা নেই, ছিন্ন বস্ত্রের মানুষ।
তিনি বলেন, আমি দেখেছি আমার মা-বোনরা এক টুকরো কাপড়ের অর্ধেক শুকাচ্ছেন, অর্ধেক পরে আছেন। প্রতি বছর মঙ্গা লেগে থাকতো। আমরা ছুটে গেছি, লঙ্গরখানা খুলেছি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, সরকার কি করছে সেদিকে দেখিনি। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আজকের নবীন কর্মকর্তারা যখন বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে যাবেন তখন এই বিষয়টার দিকেই লক্ষ্য রাখবেন যে, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলেন, সেখানেই তৃপ্তি। যতটুকু দিয়ে আসতে পারবেন সেটাই মানুষ মনে রাখবে।
শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলানয়তনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি ৩টি ব্যাচের ১০৩ জন কর্মকর্তার হাতে সনদ তুলে দেন এবং ফটোসেশনে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এতে আরও বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং একাডেমির রেক্টর (সচিব) মোমিনুর রশিদ আমিন।
১২৪, ১২৫ ও ১২৬তম ব্যাচে শীর্ষস্থান অর্জন করে রেক্টরস পদক লাভকারী তানিয়া তাবাসসুম, মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও ফারহানা নাসরিন অনুষ্ঠানে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
এরপর বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের একটি সংকলণের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির কর্মকাণ্ডের ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন