সবজি-ফল রফতানি বাড়াতে হচ্ছে রোডম্যাপ
নিজস্ব প্রতিবেদক: শাক-সবজি ও ফল রফতানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন রফতানিকারকরা। এ কারণে রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বাধাগুলো দূর হলে রফতানি অন্তত চারগুণ বাড়ানো সম্ভব। সরকারও চায় কৃষিপণ্য রফতানির সমস্যাগুলো দূর করে রফতানি বাড়াতে। এজন্য একটি বিস্তৃত রোডম্যাপ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ সংক্রান্ত কয়েক দফা মিটিংও করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় শাক-সবজি ও ফল রফতানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য রোডম্যাপ প্রণয়নে কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৪০ থেকে ৫০টি সবজি আইটেম আছে, যেগুলো রেগুলার বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। বছরে বাংলাদেশ থেকে ৮০০-১০০০ কোটি টাকার মতো কৃষিপণ্য রফতানি হয়। এটা চারগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা কোনো ব্যাপারই নয় যদি রফতানির সমস্যাগুলো দূর করা যায় বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফল রফতানি হলেও বিশ্ববাজারের তুলনায় এ রফতানির পরিমাণ খুবই কম। রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, এখন বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর শাক-সবজি-ফলসহ ৮০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার কৃষিপণ্য রফতানি হয়। সমস্যাগুলোর সমাধান হলে রফতানি অন্তত চারগুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও রফতানিকারকরা বলছেন, শাক-সবজি ও ফল রফতানির যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার মধ্যে- উচ্চ কার্গো ভাড়া, কালেকশন পয়েন্ট ও কুলিং চেইন সমস্যা, বিমানবন্দরের স্বল্প ধারণক্ষমতা ও কোল্ড স্টোরেজ সমস্যা, টেস্টিং ল্যাব ফ্যাসিলিটির অভাব রয়েছে। এছাড়া গ্যাপ নীতিমালা অনুসারে রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন, প্যাকেজিং ব্যবস্থা উন্নয়ন, ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সহজীকরণ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সার্টিফিকেট প্রাপ্তি, বিএসটিআইয়ের সনদ প্রাপ্তি, হালালনাগাদ সনদ প্রাপ্তি, ফ্রিজার ভ্যান আমদানি সুবিধা, বিমানবন্দরের কাছে কার্গো ভিলেজ করাসহ শিপিং কন্টেইনার ভেসেল সুবিধা নিশ্চিত করা, ট্রলি সুবিধা বৃদ্ধি, কনট্রাক্ট ফার্মিংয়ের জন্য কনট্রাক্ট জোনিং ঘোষণা, উপযুক্ত কৃষিপণ্যের জাত নির্বাচন, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ সুবিধা, ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি, সব বিমানে রফতানি পণ্য পরিবহন বাধ্যতামূলক করা, কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধ, কাস্টমস ডিউটি কমানো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কৃষিপণ্যের রফতানি বাড়াতে সরকার আন্তরিক। এক্ষেত্রে রফতানি বাড়াতে যত প্রতিবন্ধকতা আছে তা থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন সময় সভা হয়েছে।’
শাক-সবজি, ফলমূল রফতানি করার অপার সুযোগ আমাদের রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে। কৃষিকে লাভজনক ও বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। এরই ধারাবাহিকতায় শাক-সবজি ও ফল রফতানিতে সফলতার বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কৃষিপণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত বিমান ভাড়া বড় সমস্যা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমস্যার মধ্যে রয়েছে কার্গো স্পেস সংকট। সবজি কিংবা ফল এগুলো বিমানে পরিবহন করতে হয়, কিন্তু এটা পরিবহনের জন্য কার্গো স্পেস এভেইলেবল নয়। ইংল্যান্ডের বাজারে প্রচুর কাঁঠালের অর্ডার আছে, সবজির অর্ডার আছে। কার্গো স্পেস না পাওয়ায় এক্ষেত্রে রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো কার্গো স্পেস দিতে পারে না। অনেক এয়ারলাইন্সের অনীহা আছে, কৃষিপণ্য পরিবহন করতে চায় না। তিনি বলেন, বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। রোডম্যাপ তৈরি হচ্ছে। সমস্যাগুলো তো আমাদের জানা আছে। এখন সেগুলো কীভাবে দূর করা যাবে সেই পথ বের করা দরকার। রোডম্যাপের মাধ্যমে সেটাই করা হচ্ছে।
কৃষিপণ্যের গুণগতমানের ক্ষেত্রে এখন খুব বেশি সমস্যা নেই জানিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত কৃষিপণ্য আমাদের রয়েছে। রোগবালাইমুক্ত, জীবাণুমুক্ত শাক-সবজি ও ফলমূল হতে হবে। ৪০-৫০টি সবজির আইটেম আছে, যেগুলো রেগুলার বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। বছরে বাংলাদেশ থেকে ৮০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকার মতো কৃষিপণ্য রফতানি হয়। এটা চারগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা কোনো ব্যাপারই নয় যদি রফতানির সমস্যাগুলো দূর করা যায়’ বলেন জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শাক-সবজি, ফলমূল রফতানি করার অপার সুযোগ আমাদের রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে। কৃষিকে লাভজনক ও বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। এরই ধারাবাহিকতায় শাক-সবজি ও ফল রফতানিতে সফলতার বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তিনি বলেন, ‘সব রফতানিকারককে আমরা ডেকেছি। কী সুযোগ-সুবিধা তাদের দিতে পারি, কী ধরনের বাধা-বিপত্তি আছে সেসব দূর করতে চাই। একটা ডেস্ক করছি। সেখান থেকে আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যাব। ব্যাংকে যাব। কার্গো একটা বিরাট সমস্যা। বিদেশি এয়ারলাইন্সের বাধ্যবাধকতা ছিল ২০ শতাংশ বাংলাদেশের কন্টেইনার, শাক-সবজি নিতে হবে। সেটা এখন তারা নেয় না। এটাকে আবার আমরা আরোপ করতে চাই। বাংলাদেশে ফ্লাইট চালাতে হলে ২০ শতাংশ কৃষিপণ্য কার্গোতে বহন করতে হবে। ব্যাংকঋণ দিতে চায় না কৃষিতে, সেক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করব।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন