লামায় দেশের শীর্ষ আদালতের নাম ভাঙ্গিয়ে জমি দখলের চেষ্টা
নিউজ ডেস্ক: বান্দরবান লামা উজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে গয়ালমারা গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও হাইকোর্টের আদেশের কথা বলে জমি দখলের চেষ্টা করছে একটি সন্ত্রাসী চক্র।শুধু গ্রামবাসীদের জমি নয়, সন্ত্রাসীরা দখল করে নিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা চৌকিও! পরে বিজিবির তৎপরতায় পালাতে বাধ্য হয় সন্ত্রাসীরা।
অতি সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও ভীতি সৃষ্টি হয়। ১৭ নভেম্বর দুর্গম গ্রাম ঘুরে জানা যায়, “অন্ধকে হাইকোর্ট দেখানো” সেই বাংলা প্রবাদের এক বাস্তবতা। গ্রামের ধানক্ষেতের পাশে দেখা গেল একটি সাইন বোর্ড। তাতে লেখা রয়েছে, “বঙ্গবন্ধু উপনিবেশ ও কৃষি সমবায় সমিতি লি: গয়ালমারা ১ নং ওয়ার্ড, ৩নং ফাঁসিয়াখালী, লামা উপজেলা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা। পুনর্বাসিত ১২৬ পরিবার বন্দোবস্তী প্রাপ্ত জমি, সমিতির আওতায় সংরক্ষিত ভূমি। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মামলা নং- ৭৯০২ এর আদেশ মূলে পুনর্বাসিত পরিবারের পক্ষে সংরক্ষক সমিতির অভিভাবক জিন্নাত আলী (ভিকটিম) ও সদস্য বৃন্দ। আদেশ ক্রমে সমিতি কর্তৃপক্ষ, মোবা: ০১৮৩৭-৭৬৮৪০৬!” সাইন বোর্ড বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ও শেখ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ব্যবহার করে ব্যাবহার করা হয়।
ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী জমির মালিকরা ওউ সাইন বোর্ড তুলেফেলেন। গ্রামের কৃষকরা জানান, জিন্নাত আলী কুতুবী ওরফে আলু গোলা নামের এক ব্যাক্তি এই সন্ত্রাসী-আগ্রাসী ঘটনাটি ঘটিয়েছে। গ্রামের কৃষক মো: আব্দুল খালেক জানায়, গত সপ্তাহে জিন্নাত আলী কুতুবী ওরফে আলু গোলার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন বহিরাগত লোক নিয়ে তাদের গ্রামে প্রবেশ করে। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ওই লোকগুলো বেশ কয়েকটি জমিতে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়।
সাইনবোর্ডের ব্যানার থেকে ফোন নম্বরে ফোন করলে সমিতির প্রধান জিন্নাত আলী কুতুবী নামক এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। তাকে সাইনবোর্ড লাগানোরব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তিনি স্বীকার করেন, তিনি এ সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন।‘জমির মালিকানা কিভাবে লাভ করেছেন?’ এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ১২৬ পরিবার ১৯৮০’র দশকে সরকার থেকে পেয়েছিল”।
এতদিন তারা সেখানে যেতে পারেনি। তাদের জমি কোনটি? এর সঠিক জবাব ও নির্দিষ্ট চৌহদ্দি ব্যাখ্যা বা কাগজপত্রাদি দেখাতে পারছেন না তারা। জিন্নাত আলী আরো জানায় “উচ্চ আদালত এক আদেশে তাদেরকে এ জমিতে দখল যাওয়ার জন্য বলেন, যার রিট নম্বর- ৭৯০২/২০২১। ”তার কাছে রিটের আদেশ কপি চাইলে তিনি ওয়াটসঅ্যাপে কিছু কাগজপত্র স্ক্যান করে পাঠান। সেখানে ১২৬ পরিবারে জমি সংক্রান্ত কোন বিষয়ই উল্লেখ নেই।
সাংবাদিকরা কথা বলেন জিন্নাত আলীর আইনজীবি সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের সাথেও। ওই আইনজীবি বলেন,” ৭৯০২/২১ নম্বর রিটের একজন বাদী হচ্ছে জিন্নাত আলী কুতুবী এটা ঠিক। তবে এই রিটের আদেশে ১২৬ পরিবারের জমি সংক্রান্ত কোন আদেশ উচ্চ আদালত দেয়নি”।
এদিকে, ঘটনার দিন জিন্নাত আলী কুতুবী ওরফে আলু গোলা ৪০-৫০ জন বহিরাগত লোক নিয়ে গয়ালমারা গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি চৌকি দখলের চেষ্টা চালায়। ঘটনা টের পেয়ে ত্রি-ডেবা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং দখলদারদের সরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় নাইক্ষ্যাংছড়ি বিজিবি ক্যাম্পে গ্রামবাসী অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে অভিযুক্তরা এখনও গ্রেফতার হয়নি। গ্রামবাসী জানায়, প্রতারক জিন্নাত আলী কুতুবী প্রায়শঃ বিভিন্ন অজুহাতে মানুষের জমি দখলের চেষ্টা চালায়। এবার সে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী ও উচ্চ আদালতের নাম ভাঙ্গিয়ে নতুন ধান্ধা শুরু করেছে। গ্রামবাসী আরো জানায়, এ ঘটনায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন যদি জিন্নাত আলী প্রতারকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। আর এই ব্যাপারে লামা থানা ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন