যানজটে অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে গরু
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে কুরবানীর গরু নিয়ে চলাচল করা যানবাহনগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পড়ছে। এতে করে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে, অনেক গরু মারা যাচ্ছে। শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে গত দুই দিনে এলাকায় গাড়ির মধ্যেই ছয়টি গরু মারা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও বন্দর উপজেলার মাঝে অবস্থিত লাঙ্গলবন্দ সেতু সংস্কার কাজ করার কারণে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মালিকরা। সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানান, যানজটে আটকে থাকা একটি ট্রাকের দুটি ষাড় গরু অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এছাড়া যানজটের কারণে রাস্তায় অনেক গরু অসুস্থ হচ্ছে।
বিশ্বরোডের খায়েরপট্টি এলাকা থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে দুই কিলোমিটার রাস্তায় পাশাপাশি দুইটি করে ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গরু নামিয়ে কিছুটা ঠান্ডায় বিশ্রাম করানো হচ্ছে। আবার গাড়িতেই গরুর মুখে পানি দিয়ে তাদের তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
যশোর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিজ এলাকা থেকে কয়েকজনের গরু নিয়ে এসেছি। বিক্রি করে তাদের টাকা দেবো। কিন্তু গরুর যেই অবস্থা মনে হয়, দুইটা বাঁচানো দায় হয়ে যাবে। দেশে গিয়ে কী জবাব দেবো? রাত ১টায় এই ঘাট এলাকায় এসেছি। দুপুর ২টা হলেও এখনও পার হতে পারিনি।’
খুলনা থেকে আসা সানাউল্লাহ্ ব্যাপারী জানান, ‘গতকাল রাত ১২টায় এলাকা থেকে গরু নিয়ে ঘাটে এসেছি। চট্টগ্রাম যাবো, ঘাটের যে অবস্থা জানি না কখন পার হতে পারি। যদি আজ পার না হতে পারি, তাহলে কয়েকটি গরু বাঁচানো দায় হয়ে যাবে।’
যানজটে আটকে ২৭ মণের গরুর মৃত্যু:
‘গতকাল ছয়টা গরু নিয়া পাবনার সাথিয়া থাইকা ঢাকায় আসতেছিলাম। পথে টাঙ্গাইল থেকে অনেক যানজট শুরু হয়। ৫-৭ ঘণ্টার পথ ১৫ ঘণ্টা লাগছে বাইপাইল আসতে। পরে এখানে আইসা ২৭ মণের একটা গরু গরমে অসুস্থ হইয়া ট্রাকের মধ্যেই মারা যায়। অসুস্থ হইছে আরও পাঁচটা গরু।’
ঢাকার সাভারে যানজটে আটকা পড়ে ও ‘প্রচ- গরমে’ পাবনা থেকে আনা ২৭ মণের একটি গরু মারা গেছে। অসুস্থ আরও পাঁচটি গরু।
শুক্রবার বেলা ২টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় গরুটি মারা যায়। এ সময় গরুটি দেখতে আশপাশের লোকজন ভিড় করেন।
গরুটির মালিক মুকুল হোসেন বলেন, ‘গতকাল ৬টা গরু নিয়া পাবনার সাথিয়া থাইকা ঢাকায় আসতেছিলাম। পথে টাঙ্গাইল থেকে অনেক যানজট শুরু হয়। ৫-৭ ঘণ্টার পথ ১৫ ঘণ্টা লাগছে বাইপাইল আসতে। পরে এখানে আইসা ২৭ মণের একটা গরু গরমে অসুস্থ হইয়া ট্রাকের মধ্যেই মারা যায়। অসুস্থ হইছে আরও পাঁচটা গরু।’
তিনি আরও বলেন, এলাকায় গরুটার দাম উঠছিল সাড়ে ৫ লাখ টাকা। আমি ভালো দামে বেচব বইলা ঢাকায় আনছি। কিন্তু গরুটা মারা যাওয়ায় আমার অনেক লস হইয়া গেল। আমি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই।’
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম খান বলেন, ‘গতকাল থেকেই সাভারের সড়কে যানজট। তার সাথে তীব্র গরমও ছিল। অনেক জায়গায় গরু অসুস্থ হওয়ারও খবর পেয়েছি। ব্যাপারিরা গরুগুলোকে সুস্থ রাখতে শরীরে পানিও ঢালছে। পশুবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা কেনো নির্দেশনাও নেই।’
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে উপজেলার নবীনগর থেকে বাড়ৈপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকায় যানজট রয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভার থেকে নবীনগর পর্যন্ত আরিচামুখী লেনে ৮ কিলোমিটার, গেন্ডা থেকে হেমায়েতপুর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এবং টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে আশুলিয়া বাজার থেকে ধউর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার যানজট দেখা গেছে। এ ছাড়া জিরাবো থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
সাভার ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের ভাষ্য, ঈদে সড়কে ঘরমুখী মানুষ ও পশুবাহী গাড়ির চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানীর প্রবেশমুখ সাভারের সব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন।
গরুর ট্রাক নিয়ে আশুলিয়া বাজার থেকে বাইপাইল আসতে ভোররাত থেকে রাস্তায় অপেক্ষা করছেন ট্রাকচালক ফজলুর রহমান।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন